সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ৪৩ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। সৌদি আরবে সেটি ২০ হাজার ১১০, কুয়েতে ৩২ হাজার ৩৭৩, কাতারে ৫০ হাজার ৮০৫, বাহরাইনে ২৩ হাজার ৪৪৩ এবং ওমানে ১৫ হাজার ১২৭ ডলার। এ রকম উচ্চ মাথাপিছু আয়ই বলে দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় সহযোগিতা জোটের (জিসিসি) তালিকাভুক্ত এই ছয়টি তেলসমৃদ্ধ দেশে তৈরি পোশাকের বড় বাজার রয়েছে। কিন্তু বাজারটিতে বাংলাদেশের হিস্যা একেবারেই তলানিতে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, জিসিসিভুক্ত দেশগুলো সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে অন্তত এক হাজার কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা বাংলাদেশের ৮৫ হাজার কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। সেখানে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ৩৬ কোটি ডলার বা তিন হাজার কোটি টাকার পোশাক। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের নিট পোশাক ও ১৭ কোটি ৯২ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক।বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের একাধিক উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে জানান, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে দামি পোশাকের চাহিদা বেশি। মূলত চীন, ভারত ও পাকিস্তান বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরবে তুলনামূলক সস্তা পোশাকই বেশি রপ্তানি হয়। এর একটি বড় অংশই আবার স্টকলটের পণ্য। তবে জিসিসির বাজারটি খুবই সম্ভাবনাময়। যদিও সেখানে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে সেভাবে কখনোই চেষ্টা করা হয়নি।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য বাজারের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে জিসিসিভুক্ত দেশের পণ্য কিছুটা ভিন্ন। এখানে জোব্বা, আলখাল্লার মতো পোশাক বেশি চলে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে কী ধরনের পোশাকপণ্যের চাহিদা বেশি, সেটি আগে খুঁজে বের করতে একটি গবেষণা করা দরকার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, করোনা মহামারির মধ্যেও গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩ হাজার ১৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এই আয় তার আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলারের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে মোট পোশাক রপ্তানির ৬১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ), ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে, ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কানাডায় এবং ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নতুন বাজারে গেছে।
বাংলাদেশি পোশাকের বৃহত্তম বাজার ইইউ থেকে জিসিসির বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়। পরিমাণও একেবারে কম নয়। গত বছর ইইউ থেকে সৌদি আরবে ২৫ কোটি ইউরোর পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ৩৯ কোটি ইউরোর পোশাক। এ ছাড়া গত বছর ইউএইতে ৩৮ কোটি, কাতারে ১০ কোটি, বাহরাইনে ৯ কোটি ও ওমানে ৬২ লাখ ইউরোর পোশাক রপ্তানি করে ইইউভুক্ত দেশগুলো।
জিসিসি জোটভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশি পোশাকের জন্য ভালো বাজার হতে পারে। তবে সেখানে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।
শহিদউল্লাহ আজিম, সহসভাপতি, বিজিএমইএ
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৩৯ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বা ২২ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। একই অর্থবছরে সৌদি আরবের ৩০২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানির মধ্যে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
অবশ্য ইউএই কিংবা সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। গত অর্থবছরে ইউএই থেকে ৭২ কোটি ডলারের আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ২৯ কোটি ডলারের। এর মধ্যে পোশাক ছিল ২২ কোটি ডলার। সৌদি আরব থেকে ১০৯ কোটি ডলারের আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ২৬ কোটি ডলার। এর অর্ধেকই পোশাক।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘জিসিসি জোটভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশি পোশাকের জন্য ভালো বাজার হতে পারে। তবে সেখানে রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এ জন্য দেশগুলোতে থাকা কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের উদ্যোগ নিতে হবে। পোশাক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা সেখানে অংশ নেব। তাহলেই জিসিসিভুক্ত দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।’