দেশে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প বিপ্লবের রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে সরকার। যদিও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে পিছিয়ে থাকাসহ আরো নানা কারণে এ লক্ষ্য অর্জন মাঝে মাঝে ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে করোনা মহামারি বিশ্বের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকেও গতিহীন করে ফেলেছে। তবে এসবের পরও দেশের বেশির ভাগ রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক শিল্পায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও পোশাকশিল্পে সবুজ বিপ্লব ঘটছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, দেশের পোশাকশিল্পে সবুজ বিপ্লব ঘটছে। ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পরিবেশবান্ধব কারখানার বিচারে বিশ্বের সেরা ১০ কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের। সাত তৈরি পোশাক কারখানা হচ্ছে এনভয় টেক্সটাইল, রেমি হোল্ডিংস, প্লামি ফ্যাশনস, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, এসকিউ সেলসিয়াস, জেনেসিস ফ্যাশনস ও জেনেসিস ওয়াশিং এবং এসকিউ কোলবেন্স ও এসকিউ বিরিকিনা।
এ ছাড়া সম্প্রতি নতুন করে আরো তিনটি সবুজ কারখানা যুক্ত হয়ে দেশের মোট সবুজ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮-এ। নতুন এই তিনটি সবুজ কারখানা হচ্ছে সায়হাম নিট কম্পোজিট অ্যান্ড সায়হাম স্যুটস লিমিটেড, ফ্লেক্সেন ড্রেস মেকার লিমিটেড এবং ফেবিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আরো প্রায় ৫০০টি কারখানা গ্রিন সার্টিফিকেট পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে বিজিএমইএর নানা উদ্যোগ ছিল। এসব উদ্যোগের মধ্যে প্রধান ছিল নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি করা। সেই আলোকে পোশাকশিল্পে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে, যা দেশের পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। বলা যায়, সারা বিশ্বে সবুজ নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে এখন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। সেই স্বীকৃতি এখন আমরা পাচ্ছি। একই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পোশাকশিল্প। সরকারের সহযোগিতায় মহামারি করোনায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্তের ফলে আমরা সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছি, যা আমাদের সামনের পথচলায় আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।’
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। একটি ফ্যাক্টরি করতে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এর পাশাপাশি জমিও লাগে প্রায় তিন থেকে ১০ বিঘা। তাঁরা জানান, এ পর্যন্ত দেশে যেসব কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির খেতাব জিতে নিয়েছে, তাদের বেশির ভাগ উদ্যোক্তার বিনিয়োগই ৫০০ কোটি থেকে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ছিল। তাঁদের মতে, গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়। গুরুত্ব্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এর জন্য উদ্যোক্তাকে উৎপাদনের শুরু থেকে প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় শতভাগ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে হয়।
সবুজ কারখানায় যা থাকবে : আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা হবে তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হবে সবুজায়নের জন্য। সবুজ বাগান থাকবে। কারখানার চারপাশে খোলা জায়গা থাকবে। ভেতরেও থাকবে খোলা জায়গা। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ থাকবে সুন্দর। এক শ্রমিক থেকে অন্য শ্রমিকের দূরত্বও থাকবে বেশ। এ ছাড়া সবকিছুই হবে স্বয়ংক্রিয়। যন্ত্রপাতি হবে অত্যাধুনিক। ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হবে। থাকবে সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট। এ ছাড়া পানি রিসাইক্লিং ব্যবস্থা থাকতে হবে।