করোনার প্রভাব কাটিয়ে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প। কারখানাগুলোতে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। রপ্তানিতেও গতি ফিরেছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে চীন ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশকে পেছনে ফেলছে বাংলাদেশ। যদিও প্রবৃদ্ধির সেই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। কয়েক মাস ধরেই ভালো করছে পার্শ্ববর্তী এই দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে থাকা নিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা দুশ্চিন্তা করছেন না। তাঁরা বলছেন, পরিমাণের দিক দিয়ে ভারতের রপ্তানি অনেক কম। তবে দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হবে বলে মনে করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো চলতি বছরের ৮ মাসে ৫ হাজার ৪৩ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বাংলাদেশ ৪৩২ কোটি ডলার বা ৩৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। বাজারটিতে চীনের প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ১৩৪ কোটি ডলার। আর ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৯৫৮ কোটি ডলারের পোশাক।
তাদের এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ তিন পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। তবে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানিকারক ভারতই বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে। এই সময়ে তাদের রপ্তানি ২৬৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
ভারতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘করোনো পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর হঠাৎ করে পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তাতে তুলার দামও অনেক বেড়েছে। ভারত তুলা উৎপাদনকারী দেশ হওয়ায় তারা আমাদের চেয়ে কিছুটা কম দামে অফার করতে পারছেন। তা ছাড়া জাহাজভাড়াও আমাদের দেশের তুলনায় ভারতে তুলনামূলক কম। রপ্তানি হওয়া পণ্য পৌঁছাতেও সময় কম লাগছে। এসব কারণেই ভারতের রপ্তানিকারকেরা ক্রয়াদেশ বেশি পাচ্ছে। কারণ, ক্রেতারা যেখানে সস্তায় পাবে সেখানেই যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। তবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে। বছর শেষে ৫২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোতে ভালো ক্রয়াদেশ আছে। সে জন্য আগামী মাসগুলোতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নিট পোশাক নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। চীনে বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যার কারণে সময়মতো ওভেন কাপড় পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে। সে কারণে ওভেন পোশাক রপ্তানি কিছুটা কম হলেও হতে পারে।