উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল এমন ২৯টি তৈরি পোশাক কারখানা গত এক বছরে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামে। এসব কারখানার রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ হারিয়েছেন ৭ হাজার ১৮৮ শ্রমিক। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধসহ নানা আর্থিক টানাপড়েনে পরে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা।
চট্টগ্রাম বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ৬৯৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩০৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার ধাক্কা সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়েছে ২৯টি কারখানা। এর আগে গত বছর বিজিএমইএর নিবন্ধিত ৬৯৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০০টি বন্ধ হয়েছিল। উৎপাদনে ছিল মাত্র ২৯৩টি কারখানা।
২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রামে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো- ব্রা মাক্স লিমিটেড, বাকারা সন্স অ্যাপারেলস লিমিটেড, ড্রেস এইজ লিমিটেড, গ্লোরি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন ফ্যাশন লিমিটেড, এনেক্স ফ্যাশন লিমিটেড, ইএফএ অ্যাপারেলস লিমিটেড, জেমিনি ফ্যাশনস (প্রা.) লিমিটেড, কোকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মোমিন অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসএন স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, সামোটাফ অ্যাপারেলস লিমিটেড, তেহেরা সন্স ফ্যাশনস লিমিটেড, টিকেএম গার্মেন্টস লিমিটেড, ওয়াজিকো অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন ক্রিয়েট (প্রা.) লিমিটেড, গোল্ড মার্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড, গ্যালনট
ফ্যাশনস লিমিটেড, ইউনিটেক্স অটারস লিমিটেড, প্রোগ্রেসিভ নিটওয়্যার লিমিটেড, ফরচুন ফ্যাশনস লিমিটেড, টাফোপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, সালাম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ড্রেস শার্টস লিমিটেড, আজিম মান্নান গার্মেন্টস (প্রা.) লিমিটেড, গ্লোবাল গার্মেন্টস লিমিটেড, ফ্রাংক গার্মেন্টস লিমিটেড, ফারমিন অ্যাপারেলস লিমিটেড ও সি শোর অ্যাপারেলস লিমিডেট।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোমিন অ্যাপারেলস লিমিটেড, ইএফএ অ্যাপারেলস লিমিটেড, ওয়াজিকো অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাংক গার্মেন্টস লিমিটেড ও সি শোর অ্যাপারেলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ বেশি এবং মজুরি পরিশোধসহ অন্যান্য খাতেও বেশ সুনামও ছিল বলে বিজিএমইএ নেতারা জানিয়েছেন।
গত দুই অর্থবছরে করোনাসহ নানা সমস্যার কারণে পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৮৭ হাজার ১৩০ কোটি টাকা রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার পণ্য।
১৯৮০ সালে দেশ গার্মেন্টসের মালিক মরহুম নুরুল কাদের খানের হাত ধরে চট্টগ্রাম তথা সারাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রামকে বলা হয়- বাংলাদেশের গার্মেন্টসের জন্মভূমি। অথচ করোনা ও লকডাউনে অচলাবস্থা, ব্যাংকিং সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে ক্রমশই কমেছে পোশাক কারখানা। ফলে উৎপাদন কমার পাশাপাশি পোশাক পণ্যের রপ্তানিতেও পড়েছে ভাটা। অথচ এখানে বন্দর সুবিধা থাকায় তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এখন সেটি না হয়ে উল্টো কমে যাচ্ছে।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রামের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নানা সমস্যা মোকাবিলা করে ব্যবসা করছেন। এখানে কোনো ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় নেই। ফলে পোশাক খাতে ঋণগ্রহণ ও আমদানি ঋণপত্র খুলতে ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ছাড়া কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে আরও সহজ করা জরুরি। চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটসহ অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণেও পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে পোশাক খাতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছিল। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় লোকসানে পড়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এর জন্য অনেকটা করোনা পরিস্থিতিই দায়ী। বর্তমানে কারখানাগুলো প্রচুর বিদেশি কার্যাদেশ পাচ্ছে। আশা করি, আবারও ঘুরে দাঁড়াবে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।