Home Apparel ভালো ব্যবসা করছে স্পিনিং মিল

ভালো ব্যবসা করছে স্পিনিং মিল

ভালো ব্যবসা করছে স্পিনিং মিল
ভালো ব্যবসা করছে স্পিনিং মিল

সাধারণত স্পিনিং মিল ২-৩ শতাংশ মুনাফা করলেও চলতি বছর ৫-৬ শতাংশ হয়েছে। কোনো কোনো মিল ১০ শতাংশও মুনাফা করেছে।

গাজীপুরের সফিপুরে নিউ এশিয়া গ্রুপের রপ্তানিমুখী মালেক স্পিনিং মিল গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার সুতা বিক্রি করেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের সুতা বিক্রি ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ৯২ কোটি ১২ লাখ টাকার সুতা বিক্রি করেছে।

মালেকের মতো অধিকাংশ স্পিনিং মিলই ভালো ব্যবসা করছে। মূলত করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর থেকেই সুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্পিনিং মিলগুলোর ব্যবসা বাড়ছিল। সেই ধারা চলতি বছরও অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ধরন অমিক্রন বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না করলে আগামী মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত সুতার বিক্রয়াদেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে জানান একাধিক স্পিনিং মিলমালিক।বিজ্ঞাপন

মালেক স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ মতিন চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি কারণে স্পিনিং মিলগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ছিল। আমদানি করা তুলা আনার জন্য জাহাজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সে জন্য সময় বেশি লাগছিল। অন্যদিকে করোনায় ভারতের অনেক স্পিনিং মিল বন্ধ ছিল। হঠাৎ তুলার দামও বেড়ে গেল। সব মিলিয়ে সুতার উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্য একটা সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে।

মতিন চৌধুরী আরও বলেন, পূর্বাভাস হচ্ছে যে আগামী এক বছর তুলার দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তৈরি পোশাকের চাহিদা কেমন থাকবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে চাহিদা ভালোই থাকবে মনে হচ্ছে। সুতার দাম আগের মতো হওয়ার সুযোগ কম। অবশ্য দাম কিছুটা সংশোধন হয়ে প্রতি কেজি সুতা চার ডলারের আশপাশে থাকবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত ১০টি স্পিনিং মিলের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮টি স্পিনিং মিলেরই সুতা বিক্রি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। কমেছে কেবল দুটির।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রপ্তানিমুখী মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিল গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১২ কোটি টাকার সুতা বিক্রি করেছিল। চলতি অর্থবছরে একই সময়ে তাদের বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি টাকায়। তার মানে, প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি বেড়েছে ২৩৯ শতাংশ। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪ পয়সা। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল দশমিক ৪২ শতাংশ লোকসান।

জানতে চাইলে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলের পরিচালক এ এস এম রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে সুতার ভালো চাহিদা রয়েছে। তবে তুলার দাম বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কিছুটা কমতে পারে। তিনি বলেন, তুলা আমদানি আগের চেয়ে জটিল হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিপমেন্টই পাওয়া যাচ্ছে না।

বিটিএমএ জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার শ স্পিনিং মিল রয়েছে। এসব স্পিনিং মিল নিট কাপড়ের ৮৫-৯০ শতাংশ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করে। সুতা উৎপাদনের জন্য গত অর্থবছরে ৭৬ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছে স্পিনিং মিলগুলো।

এদিকে করোনাভাইরাসের মধ্যেই বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে। বিটিএমএ বলছে, বেশ কয়েকটি স্পিনিং মিলসহ প্রায় ২০টি নতুন বস্ত্রকল স্থাপিত হচ্ছে। আবার ২০-৩০টি পুরোনো বস্ত্রকল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করছে। তাতে আনুমানিক ২৫০ কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে আগামী দুই বছরে স্পিনিং খাতে ২০ লাখ স্পিন্ডল যোগ হবে।

বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে গত বছর প্রতিটি মিলেই বিপুল পরিমাণ সুতা অবিক্রীত ছিল। তখন গড়ে সুতার দাম ছিল ২ ডলার ৬০ সেন্ট। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে গত বছরের অবিক্রীত সুতা গড়ে এক ডলার বাড়তি দামে বিক্রি করে স্পিনিং মিলগুলো। তাই অধিকাংশ মিল মুনাফা করেছে। সাধারণত স্পিনিং মিলগুলো ২-৩ শতাংশ মুনাফা করলেও চলতি বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৫-৬ শতাংশ, কোনো কোনো মিল ১০ শতাংশও মুনাফা করেছে।

বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, সুতার ব্যবসায় মুনাফা অনেকাংশে তুলা কেনার ওপর নির্ভর করে। কম দামে তুলা কিনতে পারলেই বেশি মুনাফা হয়। তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে ভালো ক্রয়াদেশ রয়েছে। সে কারণে সুতার চাহিদাও বেশি। বিশ্বব্যাপী অমিক্রনে আক্রান্তদের মৃত্যুর খবর না থাকায় আশা করছি, চলতি বছরও ভালো ব্যবসা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here