দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সুতার দাম কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাউন্টভেদে প্রতি পাউন্ড সুতার দাম কমেছে ১০-৪০ টাকা করে। তবে দাম কমলেও বাজারে স্বস্তি ফেরেনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে সুতার দাম এখনো আকাশচুম্বী। করোনার পর ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে বেড়েছে সুতার দাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত দামে সুতা বেচাকেনা হয়নি কখনো। একদিকে সুতার দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে কাপড় উৎপাদন করে সুলভ মূল্য না পেয়ে অনেক তাঁতি কাপড় উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, সুতার দাম আরো কমাতে হবে। নইলে তাঁতিরা কাপড় উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন।
বর্তমানে ১০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে পাউন্ডপ্রতি ৬৪-৭৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও একই সুতা বাজারে বেচাকেনা হয়েছিল ৮০-৮৫ টাকা দরে। সে হিসাবে ১০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি কমেছে ১০ টাকা। ২০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ১০২-১০৩ টাকায়। সাতদিন আগেও একই সুতা বাজারে বেচাকেনা হয়েছিল ১১২-১২০ টাকায়। সে হিসাবে ২০ কাউন্টের সুতার দাম কমেছে ২০ টাকা। ৩০ কাউন্টের সুতা (এক্সপোর্ট কোয়ালিটি) বেচাকেনা হচ্ছে প্রতি পাউন্ড ১৬৫-১৭০ টাকা দরে। ১৫ দিন আগেও একই কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হয়েছিল ১৭৫-১৮০ টাকা দরে। সে হিসাবে দাম কমেছে প্রায় ২০ টাকা। ৪০ কাউন্টের সুতা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ১৬৮-১৭১ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগেও বেচাকেনা হয়েছিল ১৯৫-১৯৭ টাকা দরে। সে হিসাবে ৪০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি কমেছে ২০-২২ টাকা। ৫০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগেও একই কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হয়েছিল ২১৬-২২০ টাকা দরে। সে হিসাবে দাম পাউন্ডপ্রতি কমেছে প্রায় ২৫ টাকা। ৬০ কাউন্টের সুতা বেচাকেনা হচ্ছে পাউন্ডপ্রতি ২৩৪-২৪০ টাকা দরে। একই সুতা ১০ দিন আগেও বেচাকেনা হয়েছিল ২৭৫-২৭৬ টাকা দরে। সে হিসাবে দাম কমেছে ৩৫-৩৬ টাকা। ৮০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ২৮৫-৩০০ টাকা দরে। ১০-১২ দিন আগেও একই সুতা বাজারে বেচাকেনা হয়েছিল ৩৩৫-৩৩৬ টাকায়। সে হিসাবে ৮০ কাউন্টের সুতার দাম কমেছে প্রায় ৪০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা জানান, সুতার বাজার যেভাবে বেড়েছে তা ছিল অস্বাভাবিক। করোনার পর পরই স্পিনিং মিলগুলো অনেকটা মনোপলির মতো দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে। যে হারে বাংলাদেশের বাজারে সুতার দাম বাড়ানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার কাঁচামাল তুলার দাম সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু স্পিনিং মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সুতার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, দাম বাড়ায় অনেক তাঁতি তাদের মেশিন বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে সুতার দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু আরো কমাতে হবে। সুতার দাম না কমলে তাঁতিরা ধ্বংস হয়ে যাবে।
টানবাজারের সুতার ব্যবসায়ী আবির হোসেন জানান, গত ১০-১৫ বছরে এভাবে সুতার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। ১০০ টাকার সুতার পাউন্ড ১৭৭ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে, যা ছিল অস্বাভাবিক।