দেশটির সঙ্গে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ দীর্ঘদিন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় বাধা দ্বৈত কর।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে উজবেকিস্তানকে নতুন সম্ভাবনার দেশ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। মধ্য এশিয়ার এই দেশটিতে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার কথা বলছেন সরকার ও ব্যবসায়ীরা। অথচ বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তানে বছরে মাত্র ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা কোথায় তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে টানা বৈঠক শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন অংশীজন সূত্রে জানা গেছে, উজবেকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সেজন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের এখন দুবাই কিংবা ইস্তাম্বুল হয়ে আসা–যাওয়া করতে হয়। এতে সময় লাগে বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশে উজবেকিস্তানের দূতাবাস নেই। বাংলাদেশের কেউ উজবেকিস্তান যেতে চাইলে দিল্লিতে গিয়ে সেই দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি নানা ধরনের সমস্যায়ও পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।বিজ্ঞাপন
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাটসচিব আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উজবেকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বসে সেসব সমস্যার কথা শুনছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে তা বের করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব। তাতে একটি সুষ্ঠু সুরাহা হবে বলে আশা করছি।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উজবেকিস্তান সরকার তাদের নীতি পরিবর্তন করে তুলা রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। আগে সরাসরি তুলা রপ্তানির সুযোগ থাকলেও কোনো দেশ এখন উজবেকিস্তান থেকে তুলা আমদানি করতে পারে না। চাইলে সুতা আমদানি করা যায়।
৯ ডিসেম্বর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ব্যবসায়ীরা বেশ কিছু মতামত তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, যেহেতু দেশটি থেকে তুলা এখন আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে, সেহেতু জলবায়ু সহনশীল তুলার জাত উদ্ভাবনে সেই দেশের সহযোগিতা নিতে পারে বাংলাদেশ। তাঁদের মতে, জৈব প্রযুক্তির প্রয়োগে উজবেকিস্তান খুবই উন্নত একটি দেশ। সে ক্ষেত্রে দেশটি বাংলাদেশকে চাহিদার ভিত্তিতে তুলার জাত দিতে পারে। এজন্য গবেষণাসহ কারিগরি ও প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দিতে পারে দেশটি। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা উজবেকিস্তানের নন–বিটি জাত ও হাইব্রিড জাতের তুলা বাংলাদেশে আনার পরামর্শ দেন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় উজবেকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আরও কিছু প্রস্তাব দেন অংশীজনেরা। এসবের মধ্যে রয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তান সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, ঢাকায় উজবেকিস্তানের কনস্যুলার সেবা চালু। এ ছাড়া দুবাইয়ে উজবেকিস্তানের একটি ওয়্যারহাউস স্থাপন, যাতে সেটির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য আমদানি–রপ্তানি করতে পারেন।
জানতে চাইলে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উজবেকিস্তান একটি সম্ভাবনাময় দেশ হতে পারে। এ জন্য সেই দেশে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে পণ্যেরও প্রচার করতে হবে।
জানা গেছে, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সাভকাত মিরজিয়য়েভের আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। তাঁর ওই সফরে বেশ কিছু চুক্তি সই হতে পারে। সেই লক্ষ্যে এখন দুই দেশের মধ্যে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল, দ্বৈত কর পরিহার এবং বাংলাদেশে একটি কনস্যুলেট অফিস স্থাপন নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেত্বত্বে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত সেপ্টেম্বরে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে উজবেকিস্তান সফরে যান। তখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তানে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০২ কোটি টাকা। মূলত বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, পোশাক ও বস্ত্র খাতের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। আর দেশটি থেকে মূলত সুতা ও বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি হয়ে থাকে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে উজবেকিস্তানে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশটিতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, চা, চিংড়ি, মৌসুমি ফল, শুঁটকি, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের পর্যটন খাতেও আছে সম্ভাবনা। এমনকি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যৌথভাবে উজবেকিস্তানে ব্যবসা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা।