বাংলাদেশের পোশাকশিল্প খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমলেও বাড়ছে পুরুষের অংশগ্রহণ। তবে সার্বিকভাবে পোশাক খাতে যে হারে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। প্রতিবছর গড়ে মাত্র ১ শতাংশ হারে নতুন শ্রমিক এই খাতে যুক্ত হচ্ছেন।
পোশাক খাতে এখন মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সবচেয়ে বেশি কাজ করছেন রংপুর ও ময়মনসিংহ জেলার মানুষ। এই খাতে মোট জনবলের ১৬ শতাংশ বিদেশি । তবে শুধু ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের ৮৪ শতাংশ বিদেশি ।
এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের আর্থসামাজিক অবস্থা’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এনামুল হক।
তিনি জানান, জরিপের কাজটি শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৬০টি পোশাক কারখানার ওপর জরিপটি করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার কারখানা ১২৯টি, বাকি ৩১টি চট্টগ্রামের।
নিটওয়্যার, ওভেন ও সোয়েটার এই তিন ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে কাজ করেন, এমন ১ হাজার ১১৯ জনের ওপর জরিপটি করা হয়।
১৬০ কারখানায় প্রথম গ্রেড থেকে সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে এসিডি পোশাক খাত নিয়ে প্রথম জরিপ করেছিল।
অনুষ্ঠানে এনামুল হক বলেন, পোশাক খাতে এখন মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারী ২৪ লাখ ৯৮ হাজার এবং পুরুষ ১৭ লাখ ২২ হাজার। ৫ বছর আগে পোশাক খাতে মোট ৪০ লাখ ১ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯১ হাজার। আর পুরুষ ছিলেন ১৪ লাখ ১০ হাজার। ৫ বছরে পোশাক খাতে ২ লাখ ১৯ হাজার শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হারে শ্রমিক বেড়েছে । এই সময়ে পোশাক খাতে পুরুষের অন্তর্ভুক্তির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ শতাংশ। অন্যদিকে প্রতিবছর নারী শ্রমিক কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে।
জরিপ অনুযায়ী সার্বিকভাবে বাংলাদেশে পোশাক খাতের মোট জনবলের ১৬ শতাংশ বিদেশি। কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে চিত্রটি এ রকম – ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ৮৪ শতাংশ, কারিগরি কার্যক্রমে ১৬ শতাংশ ও মার্চেন্ডাইজিংয়ে ৮ শতাংশ বিদেশি।
আর পোশাক শ্রমিকদের ৩৫ শতাংশ মাধ্যমিক পাস। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যুক্ত হয়েছেন ২৩ শতাংশ। স্নাতক বা স্নাতক সম্মান পাস করে এসেছেন ৩ শতাংশ। আর কারিগরি পড়াশোনা করে ঢুকেছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলো মূলত ঢাকা ও আশপাশের জেলা এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। কিন্তু যেসব জেলায় কারখানা অবস্থিত, সেখানকার মানুষের পোশাক কারখানায় অংশগ্রহণ নামমাত্র। ৮৯ শতাংশ শ্রমিকই অন্য জেলা থেকে আসা। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক রংপুর ও ময়মনসিংহ জেলার।
জরিপে উঠে এসেছে, পোশাক খাতে বর্তমানে একজন শ্রমিকের মাসিক গড় মজুরি ১১ হাজার ৪০২ টাকা, যা ২০১৪ সালে ছিল ৬ হাজার ৮২০ টাকা। এই খাতে কর্মরত একটি শ্রমিক পরিবারের মাসিক আয় এখন ২৩ হাজার ৬৯৯ টাকা, ২০১৪ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৯ টাকা। প্রতিদিন শ্রমিকদের ৬৭ শতাংশ মাছ ও ৭৪ শতাংশ সবজি খাওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ ডিম, ১১ শতাংশ গরুর মাংস ও ২২ শতাংশ মুরগির মাংস খাওয়ার তথ্য জানান।
জরিপ মতে, প্রতিটি কারখানায় গড়ে ১ হাজার ৫৯১ জন শ্রমিক কাজ করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা বলেছেন ৪০ শতাংশ শ্রমিক। ৬৭ শতাংশ জানান তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাব আছে।