বছরের প্রথম ১১ মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮% বেশি।
করোনা মহামারির প্রথম ধাক্কায় গত বছর একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের কারণে পোশাকশিল্পের অনেক মালিকের কপালে দুশ্চিন্তার গভীর ভাঁজ পড়েছিল। তাঁদের কেউ কেউ ব্যবসার শেষও দেখে ফেলেছিলেন। সেই কঠিন সময় পেছনে ফেলে শিগগিরই আবার সুসময়ের দেখা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। দুই–এক মাস বাদ দিলে বছরটা পোশাক খাতের জন্য দারুণ কেটেছে। ক্রয়াদেশের বিপুল চাপের কারণে অনেক উদ্যোক্তা রীতিমতো নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন।বিজ্ঞাপন
পোশাক খাতের কথা এলে প্রথমে আসে রপ্তানির হিসাব–নিকাশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, করোনার প্রথম বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথম ১১ মাস জানুয়ারি-নভেম্বরে ২ হাজার ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। চলতি বছরে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ কোটি ডলারের পোশাক, যা দেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে রপ্তানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বছরের শুরুর দিকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে। ফলে সেসব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য করোনার আগের মতো ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। তা ছাড়া মিয়ানমারে সেনাশাসন ও ভারতে করোনার ভয়াবহতার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়। এর আগে থেকেই ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতাদের কিছু ক্রয়াদেশ চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করে। বেশ কিছু দিন ভিয়েতনামে করোনার বিধিনিষেধ থাকার কারণেও বাড়তি ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেশি আসে।
বাড়তি ক্রয়াদেশ ধরতে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ান অনেক উদ্যোক্তা। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় শিফট বা পালাও চালু করেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক না পাওয়ার এ সমস্যায় অনেক উদ্যোক্তাই চমকে উঠেছেন, হতাশ হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার ব্যাপারে এই খাতের নেতাদের মধ্যে খুব একটা তাগিদ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেক উদ্যোক্তার। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, গত বছর করোনার শুরুতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই আর ফেরেননি। অন্যদিকে শ্রমিকনেতাদের দাবি, তুলনামূলক কম মজুরি, অত্যধিক কাজের চাপ, কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারসহ নানা কারণে অনেক শ্রমিকই পোশাক কারখানায় কাজ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
পোশাক খাতে চলতি বছর সবচেয়ে বড় অঘটনটি হচ্ছে রপ্তানিতে বৈশ্বিক অবস্থান হারানোর সংবাদ। যদিও ঘটনাটি ঘটে গত বছর। তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে সেটি জানা গেছে চলতি বছর। অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল। কিন্তু করোনার প্রথম বছর ভিয়েতনামের কাছে সেই অবস্থান হারায় বাংলাদেশ। উদ্যোক্তারা অবশ্য চলতি বছরেই আবার ভিয়েতনামকে টপকে যাওয়ার আশা করছেন।
এদিকে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র খাত। ইতিমধ্যে দেশে ১৫০টি পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপিত হয়েছে। পরিবেশবান্ধব আরও কিছু কারখানা নির্মাণাধীন।
রপ্তানিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও কাঁচামাল নিয়ে সারা বছরই ভুগেছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে সুতার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে পোশাক ও বস্ত্রকল মালিকেরা মুখোমুখি অবস্থানেও চলে যান। পরে অবশ্য তা মিটমাট হয়। তবে দাম বাড়তিই আছে। উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, আগামী বছরও কাঁচামাল নিয়ে অস্থিরতা থাকবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এ বছরের শেষ ছয় মাসে ভালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের মনোযোগ বাড়ছে। ফলে আগামী বছরের প্রথম ছয় মাস পোশাক রপ্তানিতে ভালো সময় যাবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। যদি না অমিক্রন অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি তৈরি করে।’