২০২০-২১ অর্থবছরে কটনের ইয়ার্ন বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা হলেও পলিয়েস্টার, রেয়ন ও অন্যান্য সিনথেটিক কৃত্রিম আঁশে তা করা হয় ৬ টাকা।
স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়তে থাকায় আর্টিফিশিয়াল ফাইবার তথা নন-কটন সুতা বিক্রয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় করা ভ্যাট কটনের তৈরি ইয়ার্নের ন্যায় কেজিপ্রতি তিন টাকা করতে উদ্যোক্তাদের দাবি দীর্ঘদিনের।
তাদের এমন দাবির প্রতি একমত জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছিলো বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে ম্যান মেড ফাইবারের ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতি কেজিতে স্পেসিফিক ট্যাক্স তিন টাকা করার জন্য এনবিআরের কাছে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে পাঠানো হয়।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, ম্যান মেড ফাইবারে ট্যাক্স কমিয়ে কটনের ন্যায় তিন টাকা করা হলে বৈষম্য কমবে এবং স্থানীয় মিলগুলো এ ধরণের সুতা উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন, যাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
আর এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।
রপ্তানিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের অ্যাপারেলের স্থানীয় বাজারও বেশ বড়, প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের। বর্তমানে রপ্তানির জন্য আমদানি করা সব ধরণের ইয়ার্ন, ফেব্রিকসহ অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ শুল্ক ও করমুক্ত। তবে মিলগুলোর উৎপাদিত ইয়ার্ন স্থানীয় বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রযোজ্য।
আগে কটন ইয়ার্ন ও ম্যান মেড ফাইবারে একই হারে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ছিল। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কটনের ইয়ার্ন বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা হলেও পলিয়েস্টার, রেয়ন ও অন্যান্য সিনথেটিক কৃত্রিম আঁশে তা করা হয় ৬ টাকা।
স্থানীয় বাজারের জন্য সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিটল স্টার স্পিনিং মিলসের চেয়ারম্যান মোঃ খোরশেদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কৃত্রিম আঁশের সুতায় ভ্যাট কমে আসলে স্থানীয় বাজারেও এ ধরণের কাপড়ের দাম কমার সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমানে এ ধরণের ইয়ার্নের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত বোরকা, হিজাব, সালোয়ার, কিছু শার্ট ও প্যান্টে শতভাগ কিংবা আংশিক সিনথেটিক ইয়ার্ন ব্যবহার করা হয়।
বিটিএমএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, এসব সুতা ব্যবহার করে যে পোশাক তৈরি করা হয়, তা সাধারণত সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষই কিনে থাকে। দিনে দিনে এসব পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আর্টিফিশিয়াল ফাইবারে ভ্যাট হার কটনের ন্যায় প্রতি কেজিতে তিন টাকা হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা এ ধরণের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হবে এবং মানুষও অপেক্ষাকৃত কম দামে পোশাক কিনতে পারবেন।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল ফাইবারের সুতায় তৈরি করা ফেব্রিকের পোশাক তুলনামূলক অন্য যে কোন সুতায় তৈরি ফেব্রিকের চেয়ে সস্তা, ফ্যাশনেবল, বৈচিত্র্যময় ও টেকসই। বাংলাদেশ তুলা উৎপাদনকারী দেশ নয়। তাই তুলার উপর নির্ভরশীলতা কমানো সমীচীন।
পলিয়েস্টার, রেয়ন ও অন্যান্য সিনথেটিক সুতার উপর নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট কর প্রতি কেজিতে ৬ টাকার পরিবর্তে ৩ টাকা করা হলে দেশের ভোক্তারা সহজ ও কম মূল্যে এই সুতায় তৈরি পণ্য পেতে পারেন। এর ফলে কৃত্রিম সুতার ব্যবহার বাড়বে এবং ব্যয়বহুল সুতার উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
যদিও এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সাধারণত কটনের তৈরি পোশাক অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি ব্যবহার করে। সিনথেটিকের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। বাজারে কটনের ইয়ার্নের চেয়ে সিনথেটিকের ইয়ার্নের দামও বেশি।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সুপারিশ তারা আগামী বাজেটে বিবেচনা করবেন বলে জানান তিনি।
বিটিএমএ’র তথ্য বলছে, প্রতি বছরই দেশের বাজারে সিনথেটিক কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে এই কাপড়ের চাহিদা ছিল পাঁচ লাখ টনের কাছাকাছি। আর আলোচ্য সময়ে দেশের বাজারে উৎপাদন ছিল এর এক-তৃতীয়াংশ। উৎপাদিত সুতার প্রায় পুরোটাই স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটায়।