বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি ম্যান মেড ফাইবারের। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পোশাকের মধ্যে এর হার ৩০%।
বিশ্বব্যাপী পোশাকের বাজারে কটনের তুলনায় ম্যান মেড ফাইবার তথা নন-কটনের পোশাকের আধিক্য থাকলেও বাংলাদেশে এ ধরণের পোশাকের রপ্তানি তুলনামূলক অনেক কম। এ খাতে স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলোর বিনিয়োগও নগণ্য।
এর পেছনে ম্যান-মেড ফাইবার আমদানির ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক-কর হারকে দীর্ঘদিন ধরেই দায়ী করে আসছেন উদ্যোক্তারা। স্থানীয়ভাবে ম্যান মেড ফাইবারের টেক্সটাইল শিল্প গড়ে উঠার জন্য এর কাঁচামাল আমদানিতে কটনের ন্যায় সব ধরণের শুল্ক-কর প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। বিটিএমএ’র এমন দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে উভয় সংগঠন এ দাবি তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন।
বর্তমানে কটন আমদানিতে কোন শুল্ক দিতে হয় না, অন্যদিকে ম্যান মেড ফাইবার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ কিংবা আরো বেশি। এর সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে ভ্যাট ও আগাম কর দিতে হয়।
আলোচনায় বিটিএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি ম্যান মেড ফাইবারের। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পোশাকের মধ্যে এর হার ৩০%। ম্যান মেড ফাইবারে পানি ও কেমিক্যাল কম ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই ফাইবার আমদানির ক্ষেত্রে বেশি শুল্ক থাকায় স্থানীয় টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। কটনের ন্যায় এ সুবিধা দেওয়া হলে, এই পণ্যের ক্ষেত্রেও বাজার বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত করতে শুল্ককর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন তারা।
এ সময় মেশিনারির স্পেয়ার পার্টস আমদানিতে বাড়তি শুল্ক ইস্যুটিও তোলেন তারা। বর্তমানে মেশিনারিজ ১% শুল্কে আমদানির সুযোগ রয়েছে। আর ১% স্পেয়ার পার্টসে এ সুযোগ পাওয়া যায়।
এ সময় এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক কী ধরণের স্পেয়ার পার্টস প্রয়োজন, তার একটি তালিকা অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এছাড়া বস্ত্র খাতের বিদ্যমান ১৫% কর্পোরেট কর অব্যাহত রাখা, স্থানীয় বাজার থেকে কটন ক্রয়ে ২% অগ্রিম কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বিকেএমইএর পক্ষ থেকে পোশাক রপ্তানিতে বিদ্যমান ০.৫% উৎস কর ও কর্পোরেট ট্যাক্স আগামী পাঁচ বছর অব্যাহত রাখা, ক্যাশ ইনসেনটিভের উপর কর প্রত্যাহার করা, কারখানায় ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানিতে মূলধনী যন্ত্রপাতির ন্যায় ১% শতাংশে নামিয়ে আনা, রপ্তানিকারক কারখানার ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান তৈরি পোশাক খাতের জন্য তাদের দাবির প্রতি ইতিবাচক মত দেন। তিনি বলেন, পোশাক খাত ভালো করছে। তাদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করার কোন কারণ নেই, তবে সাথে সাথে রেভিনিউ ডিসিপ্লিনও দেখতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো খাতকে উদ্দেশ্য করে সুবিধা দেই, কিন্তু অন্য কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে।’
আলোচনায় এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তারাও বক্তব্য দেন।