ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) ডিজিটাল ম্যাপে আরো ৯৩ টি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে বর্তমানে ম্যাপড ইন বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭২৩ টি। দেশজুড়ে কারখানা শুমারির মাধ্যমে চলতি মাস নাগাদ এইসব কারখানার তথ্য সংগ্রহ ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অন্ট্রেপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিইডি) এই পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ করছে, যা ব্র্যাক-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এবং এমআইবি প্রকল্পটি লডেস ফাউন্ডেশন এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) প্রকল্পের কৌশলগত অংশীদার (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) হিসেবে কাজ করছে এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই/DIFE) প্রকল্পটিতে প্রয়োজনীয় কৌশলগত সহায়তা প্রদান করছে।
ম্যাপড ইন বাংলাদেশের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ২৭৫৪ টি। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর সদস্যপদ ছাড়া বাংলাদেশে কতটি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে, এসব কারখানা কোন দেশে পোশাক রপ্তানি করছে, কারখানায় কি কি পণ্য তৈরি হচ্ছে এবং কারখানাগুলো কোন কোন ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করছে তার কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। এইসব কারখানার মধ্যে যারা তাদের উৎপাদনের ৮০ শতাংশ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে তাদের সদস্যপদবিহীন কারখানা হিসেবে ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উন্মুক্ততা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে এই পর্যন্ত ৯৬৯ টি সদস্যপদবিহীন কারখানার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এই ডিজিটাল মানচিত্রে।
বিশ্বের প্রথম এই আরএমজি ডিজিটাল ম্যাপে দেখা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোতে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ২৭,৭৮,৬৭৭ জন, যা উদ্যোক্তাদের দাবি করা সংখ্যার (৪০ লক্ষ শ্রমিক) তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে কম। তবে এমআইবি তাদের কারখানার সংজ্ঞা অনুযায়ী রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড অনুসরণ করেছে যা এই ভিন্ন দাবির উল্লেখযোগ্য কারণ।
এমআইবি ডিজিটাল ডেটা ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথম কোন স্বচ্ছতা প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করেছে এবং প্রকল্পটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে শেষ হবে।
এমআইবি’র উদ্দেশ্য হল, দৃঢ়ভাবে তথ্য যাচাইকরণের এবং তথ্যের সত্যতা সমর্থনের বিধিমালা অনুসরণ করে, এই খাতের সকল অংশীদারদের পোশাক কারখানাগুলোর সঠিক, বিশ্বাসযোগ্য এবং হালনাগাদ করা তথ্য প্রদান করা যাতে আরও বেশি দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
এমআইবি বাংলাদেশজুড়ে ৬৪ টি জেলায় একটি রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক কারখানার শুমারি পরিচালনা করে। দেখা যায়, পোশাক কারখানাগুলোর সিংহভাগ মাত্র চারটি জেলা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, অন্যান্য কারখানাগুলো সারা বাংলাদেশে ১৭ টি জেলায় ছড়িয়ে আছে।
দেশের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’ কে সামনে রেখে এমআইবি একটি স্বচ্ছতা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে যা এই খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম। এছাড়াও প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট অংশীদাররা এই ম্যাপ ব্যবহার করে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলির সাথে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অন্ট্রেপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) যুগ্ম পরিচালক ও ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) প্রকল্পের লিড অপারেশন্স অফিসার আফসানা চৌধুরী জানান, “এমআইবি তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কিত সকল প্রাথমিক প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন, কারখানার নাম, ঠিকানা, শ্রমিকের সংখ্যা, কোন ব্র্যান্ডের পোশাক উৎপাদন করে ইত্যাদি এর ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুলে ধরেছে। এছাড়াও এই ম্যাপের মাধ্যমে পণ্য কেন্দ্রিক পোশাক কারখানা যেমন সেলাই, বোনা কিংবা সোয়েটার কারখানা খুঁজে নেয়া যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “এই তথ্যগুলি সরকার কর্তৃক নীতি প্রণয়ন এবং তৈরি পোশাক খাতের প্রস্তুতকারক ও কর্মীদের জড়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রচেষ্টা সংগঠিত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।”