যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুদিন যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০০ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রপ্তানি বেড়েছে দেড় গুণের মতো।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য মিলেছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৫০২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার আমদানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।বিজ্ঞাপন
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এই বাজারে গত বছর বাংলাদেশ ৭১৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২০ সালের চেয়ে এই আয় ছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের প্রথম মাসে সেই প্রবৃদ্ধিকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মাস শেষেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ
নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের। তাতে ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। তবে করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ২০২০ সালে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ বর্তমানে ক্রয়াদেশ দিতে কিছুটা চিন্তাভাবনা করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর ক্রয়াদেশ আছে। নতুন কোনো সমস্যা না হলে দেশটিতে রপ্তানির এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীন ৩৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানি ছিল ২৪৫ কোটি ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর চীন ১ হাজার ৯৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। ২০২০ সালে তাদের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৫১৫ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে দেশটি ২৬৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। গত বছর ১ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল ভিয়েতনাম। সে সময় তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ।