যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসলে আমাদের পণ্যের রপ্তানি আদেশ কমে যেতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের রপ্তানিকারক বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নীতি-নির্ধারণী সুদহার বাড়ানোর চক্রবৃদ্ধি প্রভাব দেখা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ফলত; বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য আনতে অন্যান্য উন্নত অর্থনীতিকেও তাদের সুদহার বাড়াতে হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপে অন্যান্য মুদ্রার চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে ডলারের মান। ডলার যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে- তা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর:
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও সিগনিফিক্যান্ট প্রভাব পড়বে।
করোনা মহামারির সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেওয়া কোয়ানটেটিভ ইজিং নীতি থেকে সরে এসে টাইটেনিং এর দিকে যাচ্ছে দেশটি। এর মূল লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমিয়ে আনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
এর ফলে প্রথমেই দেশটিতে সুদের হার বেড়ে যাবে। মানুষের হাতে অর্থের প্রবাহ কমে আসায় চাহিদার পরিমাণ কমে আসবে। পণ্যের দামও কিছুটা কমে আসতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি মাসে বাজার থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার উঠিয়ে নিতে চাইছে। ইমার্জিং ও ডেভেলপিং দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার চলে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের বিনিয়োগ লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য দেশে ইকোইটি, পোর্টফোলিও এমনকি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে।
বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বেড়ে গেলে প্রায় প্রতিটি দেশের মূদ্রার মানের অবনমন হবে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যে সব দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারবে, সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এটা ঠিক যে বিশ্ব অর্থনীতি এখন অনেকটাই ওভার হিটেড। প্রায় প্রতিটি দেশেই চাহিদার পরিমাণ যোগানের চাইতে বেশি থাকায় পণ্যের দাম বাড়তির দিকে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় দেশটিতে সুদের বাড়তি হারের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। প্রথমত অন্যান্য দেশের মতো আমরাও ডলারের সংকটে ভুগব। আর পণ্য পরিবহনের মূল্য ডলারে পরিশোধ করায় আমদানি ও রপ্তানি দুই খাতেই ব্যয় বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে আসলে আমাদের পণ্যের রপ্তানি আদেশ কমে যেতে পারে। একই সাথে দামও কিছুটা কমতে পারে। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের রপ্তানিকারক বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটা দুঃসংবাদ।
অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সংকটের বাইরে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সফলভাবে রেসপন্স করতে হবে। এখানেও সুদের হার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। লেন্ডিং রেটে ৯ শতাংশের ক্যাপ একেবারেই উঠিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়। আর তা না পারলে অন্তত দুই-তিন শতাংশীয় পয়েন্ট উপরে নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।
এককভাবে মূদ্রানাীতির মাধ্যমে এই ধরনের ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে ফিসক্যাল পলিসির আওতায় কিছুটা টাইটেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে আগামীতে ডলারের বিপরীতে টাকার মানের আরও অবনমন হবে। এই চাপ কিছুটা কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে কৃচ্ছতা সাধনের পথ হাটতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।