Home ARTICLES সিএন্ডএ টেক্সটাইলের পূনর্জন্ম

সিএন্ডএ টেক্সটাইলের পূনর্জন্ম

২০১৭ সালের জুন মাসে সংস্কার কাজের জন্য হঠাৎ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয় সিএন্ডএ টেক্সটাইল।

মালিকদের ঋণ খেলাপীর কারণে ২০১৭ সালে বন্ধ হয় সিএন্ডএ টেক্সটাইল। ২০২১ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণের পর আবারও উৎপাদনে ফেরাতে চাইছে আলিফ গ্রুপ।

চলতি মাসেই ফ্যাক্টরির সব কাজ শেষে উৎপাদনে ফেরানোর কথা ভাবছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

অব্যবহারযোগ্য পুরানো মেশিনারিজ সরিয়ে, এখন চলছে নতুন মেশিন বসানোর কাজ।

অধিগ্রহণের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরানোর কথা জানিয়েছিল আলিফ গ্রুপ। আনুষঙ্গিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ না আসায় সেই কথা রাখতে পারেনি তারা।

এখন কোম্পানি বলছে, প্রয়োজনীয় সব মেশিনারিজ এসেছে, ফান্ড সংক্রান্ত জটিলতাও শেষ। মেশিনারিজ স্থাপন শেষ হলে উৎপাদনে ফিরবে প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকা সিএন্ডএ টেক্সটাইলস।

সিএন্ডএ টেক্সটাইল- এর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফেরাতে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সেটা আরও বাড়তে পারে।”

তিনি বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মেশিনারিজ সেট-আপের পর ট্রায়াল রান শুরু হবে। তারপরেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।”

আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০০ টন কাপড় নিয়ে ডাইং ইউনিট চালু হবে। কোম্পানির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২০ টন। তবে শুরুতে ৫০ শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে কারখানা চলবে। পুরোদমে উৎপাদনে যেতে আরও একমাস লাগতে পারে, জানান তিনি।

চট্টগ্রামে কালুরঘাটে বিসিক শিল্পাঞ্চল এলাকায় সিএন্ডএ টেক্সটাইল- এর কারখানা। কোম্পানিটির পূর্বের মালিক বিসিক থেকে ৯০ বছরের লিজ নিয়ে কারখানা গড়ে তুলেছিলেন।

নতুন মেশিনারিজ আমদানি ও বর্তমান ফ্যাক্টরির পূর্বপাশে খালি প্লটে কারখানা সম্প্রসারণে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৪৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে।

তবে ঋণ জালিয়াতির কারণে ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ভবন নির্মাণ করতে পারেনি কোম্পানির আগের মালিকরা।

এখন অধিগ্রহণের পর নতুন মালিক আলিক গ্রুপ কারখানা সম্প্রসারণ করছে, যাতে বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা।

সরেজমিনে কোম্পানি পরিদর্শনে দেখা গেছে, একে দ্রুত উৎপাদনে ফেরাতে কারখানায় একযোগে মেকানিক, ইলেকট্রিক ও সিভিল অংশের কাজ চলছে।

আরো দেখা গেছে, পুরনো এই কোম্পানির ফ্যাক্টরির টেক্সটাইল সেটমেন্টের ডাইং অংশে নষ্ট যন্ত্রপাতি খুলে ফেলা হচ্ছে। পাশে রাখা আছে নতুন মেশিন।

দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে কোম্পানির অনেক ভারী মেশিনারিজ নষ্ট হয়েছে। ডাইং ইউনিটের সব মেশিন প্রায় নষ্ট, যাতে নতুন করে সেট-আপ করা হবে। তবে গার্মেন্টস ইউনিটের বেশির ভাগ মেশিন পুনরায় ব্যবহারযোগ্য, যা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।   

আলিফ গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানি আলিফ ম্যানুফেকচারিং ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

এই গ্রুপটি দুটি কোম্পানিকেই পুঁজিবাজারের ওটিসি মার্কেট থেকে অধিগ্রহণ করেছে। বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিএন্ডএ টেক্সটাইলকে লাভজনক করার আশায় অধিগ্রহণ করেছে আলিফ গ্রুপ।

সিএন্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণ করে চালুর বিষয়ে আজিমুল ইসলাম বলেন, “লোকসানি ও বন্ধ হওয়া কোম্পানিটি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা রক্ষা পাবে। কারণ মালিকরা তখন ছিল না। সরকারের ইউটিলি বিল বকেয়া ছিল। এখন কোম্পানি চালু হলে সবপক্ষই উপকৃত হবে।”

কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, তাদের ডাইং ইউনিটের উৎপাদন শুরুর জন্য বয়লার, নিজস্ব সাবমারসিবল ব্যবস্থায় পানির ব্যবস্থা, কম্প্রেসার, গ্যাস লাইনের জন্য ২টি জেনারেটর, বিদ্যুৎ লাইনের জন্য ১টি জেনারেটর, ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে ডাইং ইউনিটে দৈনিক ২০ টন কাপড় ডাইং করার সক্ষমতা রয়েছে। পণ্যের চাহিদাও রয়েছে।

সিএন্ডএ টেক্সটাইল ২০১৫ সালে একটি ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।

এর প্রসপেক্টাস অনুসারে, কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ৩০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে।

২০১৭ সালের জুন মাসে সংস্কার কাজের জন্য হঠাৎ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয় সিএন্ডএ টেক্সটাইল।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএসইসি সাতজন পরিচালক নিয়োগ করে কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করে।

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত সিএন্ডএ টেক্সটাইলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ সালে।

২০২০ সালের ২৯ জুলাই বিএসইসি দেখে, সিএন্ডএ টেক্সটাইলের এমডি রুকশানা মোরশেদ, পরিচালক শারমিন আক্তার লাভলী এবং বাংলাদেশ জুতা শিল্প লিমিটেড একত্রে কোম্পানির প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ শেয়ার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করেছে। এই বিক্রয় থেকে তারা প্রায় ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বেশ কয়েকটি নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি হিসাবে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক পরে তাদের ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করে এবং তালিকাভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানিতে পরিচালকের ভূমিকা গ্রহণে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here