তারা বলছেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সব কিছুর দাম বাড়ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানির সোর্স ট্যাক্স দ্বিগুণ করায় যারা বর্তমানে লোকসানে আছে, তাদের লোকসান আরো বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি খাতের জন্য কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হলেও উৎসে কর (সোর্স ট্যাক্স) দ্বিগুণ করায় এ খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সব কিছুর দাম বাড়ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানির সোর্স ট্যাক্স দ্বিগুণ করায় যারা বর্তমানে লোকসানে আছে, তাদের লোকসান আরো বাড়বে, আর যারা একেবারে প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে, তারাও লোকসানে চলে যাবে। এ কারণে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গত বুধবার টিবিএসের এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের সোর্স ট্যাক্স দ্বিগুণ করায় নিজেদের অসন্তোষের কথা জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমই) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খান।
ফজলুল হক বলেন, “বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার পদধ্বনি। আমেরিকাতে ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতির কারণে তারা কম কিনবে এবং ভবিষ্যতে সেখানে মন্দার পরিস্থিতিও রয়েছে। এই সময়ে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে?”
“আবার বাজেটের দিনেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, তেলের দামও বাড়বে। সবই আমাদের উৎপাদন ব্যয়ের উপর প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়গুলো যুক্তিসঙ্গত দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা দরকার।”
তিনি বলেন, “অতীতে সরকার পোশাক খাতের অগ্রগতির স্বার্থে অনেক সহায়তা দিয়েছে। ট্যাক্সের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের রপ্তানি আরো বাড়বে।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানির ব্যয়সহ অন্যান্য কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার তথ্য তুলে ধরে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমরা কি হঠাৎ করেই এখন দ্বিগুণ প্রফিট করা শুরু করলাম, যে এই সময়ে ট্যাক্স দ্বিগুণ করতে হবে?” এই এক শতাংশের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের আঘাত আসবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বাজেটের অনেক ভালো দিককে এই একটি কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “কর্পোরেট কর ১২%। কিন্তু এক শতাংশ সোর্স ট্যাক্স নেওয়ার পর তা যদি ফেরত নেওয়ার সুযোগ না থাকে (লোকসান বা কম প্রফিট হলে) তাহলে তো কম কর্পোরেট করহার দিয়ে কোনো লাভ হলো না।
ব্যাংকে আমাদের যে সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে এফডিআর রাখতে হয়, তার উপর ২৫% ট্যাক্স আদায় করা হয়। এই টাকা যদি ২০ কোটি টাকার উপরে হয়, তার উপর সারচার্জ। আগে যে ট্যাক্স কর্তন করা হয়েছে, তা ফেরত পাওয়ারও সুযোগ নেই।”
“আবার ডিসিটিরা (ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস) অনেক খরচ ডিজঅ্যালাউ করছেন, যার উপর ৩০% ট্যাক্স ধরা হয়।”
আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের উপর জুলুমের ব্যবস্থা করে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ট্যাক্সেশন সিস্টেম ইনভেস্টমেন্ট এবং ব্যবসাবান্ধব নয় – যার কারণে এত চেষ্টা করেও ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আনতে পারছি না।”
অবশ্য বাজেটে রপ্তানি নগদ সহায়তা অব্যাহত রাখাসহ আরো কিছু ইতিবাচক প্রস্তাবে তাদের স্বস্তির কথাও প্রকাশ করেন এই দুই উদ্যোক্তা।
তবে নগদ সহায়তার বিষয়ে ফজলুল হক বলেন, “নগদ সহায়তার বড় অংশই মূলত টেক্সটাইলের জন্য দেওয়া হয়। লোকাল ফেব্রিক বা সুতা ব্যবহার করার জন্য এ সহায়তা দেওয়া হয়।”
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্যে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার পদধ্বনির কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও চীন থেকে ডাইভার্ট হওয়া ক্রয়াদেশ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনাও দেখছেন তারা।
ফজলুল হক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনের তুলায় নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখান থেকে অর্ডার ডাইভার্ট হবে, যার বেশিরভাগই যাওয়ার কথা ভিয়েতনামে। কিন্তু সেখানে তীব্র শ্রমিক সংকট হওয়ায় বড় অংশ বাংলাদেশে আসতে পারে। তবে ভারত ও পাকিস্তান ভালো অংশ পেতে পারে।”
অবশ্য এসব সম্ভাবনা ধরার ক্ষেত্রে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ব্যবসাবান্ধব হওয়ার আহ্বানও জানান মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানির প্রধান বাধা এনবিআর। এখানে উন্নতি হওয়া দরকার।”
শাহরিয়ার খান বলেন, “সরকার অনেকদিন ধরেই পোশাক খাতের জন্য বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিয়ে আসছে। এনবিআরও অতীতের তুলনায় অনেক ইভল্ভড হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বিজনেস ফ্রেন্ডলি হবে।”