তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাট খাতের অনেক রপ্তানিমুখী কারখানায় ক্রয়াদেশ কমছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বাড়ছে উৎপাদন খরচ।
মিরপুরে ৩০ বছর আগে যাত্রা শুরু করে আল্পস অ্যাপারেলস। বর্তমানে কারখানাটির ঠিকানা আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায়। মূলত ইউরোপীয় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক তৈরি করে আল্পস। চলতি জুলাইয়ের পর কারখানাটিতে মাত্র দেড় মাসের নিট পোশাক উৎপাদনের ক্রয়াদেশ আছে। তারপর উৎপাদন চালানোর মতো কোনো ক্রয়াদেশ নেই কারখানাটির।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আল্পস অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০-২৫ দিন ধরে নতুন কোনো ক্রয়াদেশ পাইনি। সে কারণে মধ্য সেপ্টেম্বরের পর উৎপাদনের জন্য আপাতত কোনো ক্রয়াদেশ নেই।’ তবে তিনি জানান, তাঁর আরেকটি কারখানা ফ্যাশন ডট কমে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদনের মতো ক্রয়াদেশ আছে। কারখানাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ের শার্ট তৈরি করা হয়।
আল্পস অ্যাপারেলসের মতো অনেক রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানায় ক্রয়াদেশ কমে আসছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ বাড়ছে পোশাক কারখানায়। আর গ্যাস–সংকটে অনেক বস্ত্রকলের উৎপাদন ৫০ শতাংশের মতো ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সময়মতো সুতা ও কাপড় সরবরাহ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন কোনো অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত না পায়, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাকশিল্প থেকে আসে। তারপরের চার শীর্ষ রপ্তানি খাত হচ্ছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে এ চার খাতের রপ্তানি আয় ছিল ৫১৫ কোটি ডলার।
অর্থাৎ প্রতিটি খাতের রপ্তানি ছিল শতকোটি বা বিলিয়ন ডলারের বেশি। শতকোটি ডলারের বেশি রপ্তানি আয়ের পাঁচটি খাতের মধ্যে তৈরি পোশাক, পাট ও চামড়া খাতের রপ্তানিকারকেরাও এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ, তাঁদের ক্রয়াদেশ কমছে। তবে হোম টেক্সটাইল ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানিতে এখনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। যদিও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে সব খাতেরই।
কয়েকজন রপ্তানিকারক বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে সেখানকার মানুষ অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাইরে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। তাতে সেখানকার ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছেন। একদিকে ক্রয়াদেশ কমছে, অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। সব মিলিয়ে তাই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ দেশের রপ্তানিকারকেরা।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই খাত হচ্ছে পণ্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। বিদায়ী অর্থবছর প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আর পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার। তবে পণ্য আমদানি খরচ ৮ হাজার ৭৮৭ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রেকর্ড আমদানির কারণে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যয় সংকোচনসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
চামড়া ও পাট খাতের ক্রয়াদেশ কমছে
দেশের তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। দূষণের দায়ে ২০১৭ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর হয়। সেখানেও দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। বর্তমানে বাংলাদেশি চামড়ার মূল ক্রেতা চীন। বিদায়ী অর্থবছরে ১২৫ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ছিল ৩২ শতাংশ। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এখন ক্রয়াদেশ কমছে এ খাতে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা জ্বালানি ও খাদ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোও চামড়াজাত পণ্যের ক্রয়াদেশ দেওয়াও কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে বিদায়ী অর্থবছরে ১১২ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি কমেছিল এ খাতের। বর্তমানে বাংলাদেশি পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইইউ, তুরস্ক ও চীন। পোশাক ও চামড়ার মতো এ খাতের রপ্তানি ক্রয়াদেশও কমছে।
জানতে চাইলে পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম বলেন, ইউরোপের বড় কোম্পানিগুলো বেশি সমস্যায় পড়েছে। তাই তারা ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
রপ্তানি তিন খাতে ক্রয়াদেশ কমলেও এ নিয়ে সমস্যা নেই কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিকারকদের। এ খাতের ক্রয়াদেশ স্বাভাবিক আছে। জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ও গ্যাস-বিদ্যুতের চলমান সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। বিদায়ী অর্থবছরে ১১৬ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যায়।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হওয়ায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানি ক্রয়াদেশে এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে সবাই ভুগছে। এ সংকটে আমাদেরও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন বাড়িয়ে লোকসান পোষানোর চেষ্টা করছি।’
কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মতো হোম টেক্সটাইল খাতও ভালো অবস্থায় আছে। ক্রয়াদেশ কমছে না, বরং বাড়ছে। রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইলের বড় প্রতিযোগী দেশ পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে দেশটি থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরে ১৬২ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ থেকে টেরিটাওয়েলসহ হোম টেক্সটাইল পণ্য কেনে। আবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দুনিয়াজুড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা। সব মিলিয়ে ভালো ক্রয়াদেশ আসছে।
পোশাকের ক্রয়াদেশে ভাটার টান
বর্তমানে কারখানাগুলোতে শীতের পোশাক তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসার সময়ও এখন। গত বছর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ এসেছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ কম আসছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে বলে জানান এ খাতের উদ্যোক্তারা।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের পোশাকই বেশি তৈরি করি। গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ আসার হার কমেছে। আবার দামও কমেছে ৮ থেকে ১০ শতাংশ।
রপ্তানি বাজারের জন্য পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) সনদ দেয় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। ফলে ইউডির সংখ্যা দিয়ে পোশাকের ক্রয়াদেশ কম নাকি বেশি সেটি বোঝা যায়। বিজিএমইএর নেতারা জানান, গত মে-জুন মাসে ইউডি নেওয়ার সংখ্যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে একই সময়ে বিকেএমইএ থেকে ইউডি নেওয়ার সংখ্যা ১০ শতাংশ কমেছে।
জানতে চাইলে স্পারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পোশাকের ক্রয়াদেশের পরিস্থিতি বেশি ভালো না। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম আসতে পারে। তিনি জানান, স্পারোর কারখানায় বেশি দামের পোশাকের পাশাপাশি কিছু সস্তা পোশাকও তৈরি হয়। সস্তা পোশাকের ক্রয়াদেশও ১৫-২০ শতাংশ কমে গেছে।
বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ইইউর দেশগুলোতে ৫০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২১ ও যুক্তরাজ্যে সাড়ে ১০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ১ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ইইউর দেশগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে তৈরি পোশাকের দাম ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বিক্রিও কমেছে। তাতে খুচরা বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের মজুত বেড়ে গেছে। গত মাসেই বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড টার্গেট পোশাকের মজুত কমাতে ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো আগ্রাসী উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। একই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে পোশাকের বড় ক্রেতা ওয়ালমার্ট ও গ্যাপ।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর গত বছরের প্রথমার্ধ থেকেই প্রচুর ক্রয়াদেশ আসে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোশাকের রপ্তানিমূল্য বাড়ে ১০ শতাংশ। সব মিলিয়ে বিদায়ী অর্থবছরে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। বর্তমানে কাঁচামাল, বিশেষ করে সুতার দাম কমছে। ক্রয়াদেশও কমছে। চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি না হওয়ার শঙ্কাই বেশি।
অবশ্য সব কারাখানার ক্রয়াদেশ যে কমেছে, তা নয়। ছোট কারখানাগুলোর ক্রয়াদেশে তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। তেমনই এক কারখানা সাভারের এনআর ক্রিয়েশন। তারা ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও চেক রিপাবলিকের সাত ব্র্যান্ডের কাছে সরাসরি পোশাক রপ্তানি করে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত কারখানাটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনের পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ আছে। এনআর ক্রিয়েশনের স্বত্বাধিকারী আলকাছ মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করি। ক্রয়াদেশ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা নেই।’
এদিকে ঈদুল আজহার আগে থেকে গ্যাসের সংকটে ভুগছে রপ্তানিমুখী বস্ত্র কারখানাগুলো। চলতি মাসের শুরুতে গ্যাস-সংকটে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও গাজীপুরের বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন ২০-৬০ শতাংশ কমে যায়। জানতে চাইলে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদের পর সব কারখানা এখনো পুরো মাত্রায় উৎপাদনে যায়নি। আগামী সপ্তাহে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, শিল্পে গ্যাস দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তা না হলে রপ্তানি ব্যাহত হবে।’
দুই বছর আগেও নিটের চেয়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি বেশি হতো। বিদায়ী অর্থবছর ওভেনের চেয়ে ৩৮২ কোটি ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি বেশি হয়েছে। ওভেন পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়ের বড় অংশ আমদানি করতে হয়। আর নিট পোশাকের ৯৫ শতাংশ কাপড় দেশেই হয়। সেই কাপড় উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে গ্যাসের প্রয়োজন হয়।
নারায়ণগঞ্জের নিট কারখানাগুলোতে দিনের বেলা গ্যাসের চাপ ২-৩ পিএসআইয়ের বেশি থাকছে না। সে কারণে কাপড় রং করা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এতে সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রয়াদেশ কমার পাশাপাশি আমাদের নতুন দুশ্চিন্তা গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট।’
করণীয় কী
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সময়টা একটা বিশেষ সময়। মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের পোশাকের আমদানিকারক দেশগুলোতে ভোক্তা চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত না পায়, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার জন্য শিল্পকারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।