বছর পাঁচেক আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। সেই রপ্তানি বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছরে পৌঁছেছে ৭২ কোটি মার্কিন ডলারে। সেই ধারা চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) ভারতে ১৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯৯ শতাংশ বেশি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর শেষে পার্শ্ববর্তী দেশটিতে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারেও ভালো করছে পোশাক রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশটিতে ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। পোশাক রপ্তানির নতুন বাজারের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ দেশের একটি দক্ষিণ কোরিয়া।
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নতুন বাজারের অধিকাংশ দেশেই ভালো করছে বাংলাদেশ। ব্যতিক্রম শুধু রাশিয়া ও চীন। এই দুই দেশে রপ্তানি কমেছে। সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে নতুন বাজারে ১২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।
করোনাকালে প্রচলিত বা বড় বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারেও পোশাক রপ্তানি সংকটে পড়ে। তবে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তাতে বিদায়ী অর্থবছরে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে সেটি আরও বেগবান হয়েছে। গত অর্থবছর শেষে মোট পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাজারের হিস্যা ছিল ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সেটি বেড়ে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৭১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭০ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৯ টাকা ধরে)। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে, ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে, ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ যুক্তরাজ্যে, ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ কানাডায় এবং ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ নতুন বাজারে।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতির আঁচ সব বাজারেই পড়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। নতুন ক্রয়াদেশ আসার হারও বেশ কম। ফলে বছর শেষে নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকবে কি না,তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।
নতুন বাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি হওয়া সাতটি দেশ হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও আরব আমিরাত। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে জাপানে ২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ। আর অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জড়িয়ে পড়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। এর ফলে রাশিয়ায় রপ্তানি কমতে থাকে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ কম। অন্যদিকে এ সময় চীনে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পোশাক। এই গন্তব্য রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪ কোটি, মেক্সিকোতে ৬ কোটি, মালয়েশিয়ায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ, সৌদি আরবে ২ কোটি ৯৩ লাখ, তুরস্কে ৩ কোটি ৯২ লাখ, নিউজিল্যান্ডে ২ কোটি, চিলিতে ২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, ব্রাজিলে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও করোনার কারণে চীনে রপ্তানি কমে গেছে। সেটি না হলে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি আরও ভালো জায়গায় যেত।