Home বাংলা নিউজ দেশের পোশাক খাতের বিরুদ্ধে নকল পণ্য রপ্তানির অভিযোগ

দেশের পোশাক খাতের বিরুদ্ধে নকল পণ্য রপ্তানির অভিযোগ

বাংলাদেশের কিছু কারখানা বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক এবং এমনকি জুতাও নকল করছে—এ অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে গত মাসে আলাদা দুটি আবেদন জমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড পণ্যের একটি সংগঠন ও ফ্রান্সের একটি শ্রমিক ইউনিয়ন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনটির নাম আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। সংগঠনটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ৩০ জানুয়ারি। আর ফ্রান্সের সংগঠনটির নাম ইউনিয়ন ডেস ফেব্রিকস (ইউনিফ্যাব)। এটি ইউএসটিআরে আবেদন করেছে গত ২৬ জানুয়ারি।

উভয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাইয়ে ‘বিশেষ ৩০১ পর্যালোচনা’ শিরোনামে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউএসটিআর। এই পর্যালোচনা বৈশ্বিক মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষা ও তা কার্যকরের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো এলডিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে উচ্চ মূল্যের বাজার ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখবে বলে আশঙ্কা করা যায়।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, শুধু বাংলাদেশ নয়; ভিয়েতনাম, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) আরও কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধেও নকল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির অভিযোগে একই ধরনের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও উইং যথাসময়েই ইউএসটিআরকে প্রাথমিক মতামতও জানিয়েছে। এতে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগকে ‘অন্যায্য ও ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নকল পণ্য উৎপাদন প্রতিরোধে বাংলাদেশে অন্তত ১০টি আইন রয়েছে বলে জানিয়েছে।

মতামতে সই করেছেন ডব্লিউটিও উইংয়ের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে একটা মতামত পাঠিয়েছি। বিশদ মতামত পাঠাব আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।’

বিশদ মতামত পাঠানোর আগে তৈরি পোশাক ও নিট পোশাক খাতের দুই সমিতি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত মতামত পাঠানো হবে ইউএসটিআরে।

সূত্র জানায়, ইউএসটিআর সাধারণত তিন ধরনের তালিকা করে। প্রথমটি হচ্ছে নজরদারি তালিকা, দ্বিতীয়টি অগ্রাধিকার তালিকা ও তৃতীয়টি নজরদারিযোগ্য অগ্রাধিকার নজরদারি তালিকা। প্রথমটিতে শাস্তি বলতে কিছু থাকে না। দ্বিতীয়টিতে শাস্তির জন্য কড়া বার্তা দেওয়া হয়। আর তৃতীয়টিতে শাস্তি দেওয়া হয়। বর্তমান পর্যায়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কোনো সদস্য কোনো নকল পণ্য উৎপাদন ও তা রপ্তানি করার সঙ্গে যুক্ত নয়। ছোট কোনো প্রতিষ্ঠান যারা বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয়, তারা এ কাজ করতে পারে। সে ক্ষেত্রেও যেসব দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হয়, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’ বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোরও (ইপিবি) এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন শহীদুল্লাহ আজিম।

অভিযোগ ও তার ভিত্তি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইউএসটিআরকে এএএফএ জানিয়েছে, বাংলাদেশে নকল পণ্য ব্যাপক হারে উৎপাদন হচ্ছে। দেশটি থেকে এসব পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে। ২০২২ পঞ্জিকা বছরে সারা বিশ্বে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ হয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। জব্দ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে।

ইপিবিরও দায়িত্ব রয়েছে বলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে জানতে চাওয়া হয় ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ জানতে পারলে নাহয় তদন্ত করে দেখা যেত।’

এএএফএর আবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে পরিচালিত ১৭টি অভিযানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত নকল পণ্যের তথ্য উঠে আসে। এসব জব্দকৃত পণ্যগুলোর উৎস বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মেধাসম্পদ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন এ কারণে বাংলাদেশকে উচ্চ নজরদারির তালিকায় রাখে।

অভিযোগের ধরন সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে জানান, ‘ধরুন, নাইকি এক লাখ জোড়া জুতার ক্রয়াদেশ দিল বাংলাদেশি একটি কোম্পানিকে। কোম্পানিটি এক লাখ জোড়া রপ্তানিও করল। কিন্তু কোম্পানিটি এক লাখ জোড়ার বাইরে আরও চার লাখ জোড়া জুতা তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানিতে রপ্তানি করল। ইউএসটিআরে মূলত এ ধরনেরই অভিযোগ উঠেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ এখন উচ্চ মূল্যের পণ্য রপ্তানিতে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। ফলে ভোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের দিক থেকেও পণ্যের গুণমান, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। বাংলাদেশের জন্য তা নতুন হতে পারে। তবে বিষয়টিকে হালকা করে বা নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে এখনই নকল পণ্য রপ্তানি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন গোলাম মোয়াজ্জেম। বলেন, ‘এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে উচ্চমূল্যের বাজার ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখবে বলে আশঙ্কা করা যায়।’আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here