রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে হিজাব কিনতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রাওদা ওয়াহাব। তিনি জানালেন, দেশে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হিজাব পরবেন। শুধু দেশেই নয়, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও নিয়মিত ব্যবহার করবেন হিজাব। এজন্য বেশ কয়েক রঙের হিজাব একবারেই কিনে নিয়ে যাবেন। মৌচাক মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে হিজাবের সংগ্রহ দেখে তিনি বেশ আনন্দিত। বিভিন্ন কোয়ালিটির আরামদায়ক হিজাব মিলছে বেশ স্বল্পমূল্যেই।
দেশে হিজাবের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হিজাব বিক্রেতারা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন হিজাব পরছেন নারীরা, আবার তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে কিংবা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেও হিজাব জড়িয়ে নিচ্ছেন মাথায়।
রাজধানীর স্থানীয় মার্কেটগুলো থেকে শুরু করে নামীদামী শপিংমলগুলোতে হিজাবকে কেন্দ্র করে দোকানের সংখ্যা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। সরেজমিন এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার হিজাব রয়েছে। কটন, সিল্ক, চেরি, টিস্যু, অর্গাঞ্জ, ডিস্কজ, সিমারসহ বিভিন্ন কাপড় ও ডিজাইনের ওড়না হিজাব এখন চাহিদার শীর্ষে। রয়েছে নিজস্ব ডিজাইনের পাথর বসানো হিজাব ও মালোয়শিয়ান হিজাবও৷ বিক্রেতারা জানান, দেশের বাজারে পাওয়া হিজাবের অধিকাংশই আসে চায়না থেকে।
নানা রঙ ও ডিজাইনের হিজাব মিলছে বাজারে
ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় হিজাবের চাহিদা বেড়েছে মন্তব্য করে এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত মাল্টি ফ্যাশন হিজাবের ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের গ্রামগঞ্জের নারীরা মাথায় সব সময় মাথায় কাপড় দিয়ে রাখতো। এখনকার প্রজন্ম আরও বেশি আধুনিক, তাই তারা ভিন্নতা আনতে বিভিন্ন ডিজাইনের হিজাব খোঁজে। ফলে দেশে বড় একটি হিজাবের বাজার তৈরি হয়েছে।’
পূর্বের তুলনায় হিজাবের চাহিদা বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরাতে ১৫ থেকে ২০ টা হিজাবের দোকান ছিলো। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে প্রায় আড়াইশ হয়েছে। যদি চাহিদা না বাড়তো তাহলে বসুন্ধরার মতো এত বড় শপিংমলে এতগুলো দোকান হতো না। আর বসুন্ধরায় চাহিদা থাকা মানে সারা দেশেই লোকাল মার্কেটগুলোতে হিজাব বোরকার চাহিদা রয়েছে বলা যায়।’
একই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অধিকাংশ নারী একাধিক হিজাব কেনেন মন্তব্য করে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আল ওয়ালিদ বোরকা হাউজের বিক্রয়কর্মী রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে হিজাবের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আগে সালোয়ার কামিজের ওড়নাকে হিজাব হিসেবে ব্যবহার করা হতো বেশি। তবে এখন সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি টপস কিংবা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরার চল বেড়েছে। এসব পোশাকের সঙ্গেও নারীরা হিজাব পরছেন। এমনকি একই ডিজাইনের বোরকা বা জামার জন্য একাধিক হিজাবও কিনে নিয়ে যান অনেকে।’
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের হিজাবের দোকান মিডেল ইস্টের বিক্রেতা সনিয়া আক্তার বলেন, ‘এত এত ভিন্নতা থাকার পরেও কখনও কখনও ক্রেতার পছন্দসই হিজাব আমরা দিতে ব্যর্থ হই। তবে ক্রেতারা ঠিকই দশটা দোকান ঘুরে তার পছন্দের রঙের ডিজাইনের হিজাব খুঁজে বের করে ফেলেন। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে হিজাব কিনতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চান না ক্রেতারা। বরং এই বসুন্ধরায় শুধু হিজাব বিক্রি করে এমনও দোকানও রয়েছে, তবুও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কম থেকেই যায়।’
নিয়মিত হিজাব ব্যবহার করার ফলে ব্যবহারকারীদের কাছে একাধিক হিজাব থাকে, তাই প্রত্যেকটি হিজাবই ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পছন্দ করা হয় জানিয়ে গৃহিণী উম্মে হাবিবা শিরীন বলেন, ‘যারা নিয়মিত হিজাব ব্যবহার করেন তারা একাধিক হিজাব রাখেন৷ এটি নিয়মিত একটি পোশাকের মতোই। তাই পোশাকের যেমন ভিন্নতা থাকে, তেমনি হিজাবেও ভিন্নতা রয়েছে৷ তাছাড়া প্রত্যেকেই চায় মানানসই হিজাব ব্যবহার করতে। বাজারেও নানা ডিজাইনের হিজাব পাওয়া যায়। দেখতেও সুন্দর। এছাড়া মার্কেটগুলোতে হিজাবের দোকান বেড়েছে। তাই কেনাকাটা করতে গেলে দুই একটা হিজাব কেনা হয়েই যায়।’