Home বাংলা নিউজ রপ্তানির পোশাক চুরি করে কোটিপতি, গ্রেপ্তার ৪

রপ্তানির পোশাক চুরি করে কোটিপতি, গ্রেপ্তার ৪

প্রায় দেড় যুগ ধরে শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। চক্রটির মূলহোতা চুরির টাকায় ২০ কোটি টাকায় বাড়ি ও মাছের খামার গড়েছেন। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা (৫২), মো. ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো. হৃদয় (২৮)।

প্রায় দেড় যুগ ধরে শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল চক্রটি। চক্রটির মূলহোতা চুরির টাকায় ২০ কোটি টাকায় বাড়ি ও মাছের খামার গড়েছেন

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৪ এর পৃথক পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দুপুরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব জানায়, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। পরের দিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান এক লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায়। সেই মোতাবেক বন্দর থেকে চালানবহনকারী জাহাজটি রওনা দেওয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করেন। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া একটি ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যায় গার্মেন্টস মালিকপক্ষ।

সেখানে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি। অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরবর্তীতে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয়েছে মালিকপক্ষকে। এ ঘটনায় গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। 

এই অভিযোগের রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‌্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তার শাহেদ গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতের মাস্টারমাইন্ড, এই চক্রের মূলহোতা ও নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় ও সম্মতিতে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “৪০-৫০ জনের এই চক্রে রয়েছে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল লেবার। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ট্রান্সপোর্টে গার্মেন্টেসের মালামাল বহন শুরু করে। একপর্যায়ে তারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ডভ্যানের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে এবং অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করে।”

গার্মেন্টস থেকে রপ্তানির জন্য পণ্য রওনা হওয়ার পর চক্রটি চুরির কাজ শুরু করে। যানবাহন থেকে ৩০ থেকে ৩৫% পণ্য সরিয়ে আবার প্যাকেজিংয়ের পর বন্দরের পাঠিয়ে দেয় তারা।  

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, “গ্রেপ্তার শাহেদ চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে ২টি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে ৪টি কাভার্ড ভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করেন। সে কাভার্ড ভ্যানের চালক এবং সহকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির কার্যক্রমের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র তৈরি করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি স্বশরীরে উপস্থিত থেকে চুরির কার্যক্রম চালিয়েছেন।”

“২০১৮ সালের পর আড়ালে থেকে চুরির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন শাহেদ। প্রত্যেকটি চুরির ঘটনায় আয়কৃত অর্থের সর্বোচ্চ অংশ তিনি পেতেন। মৌলভীবাজার শহরে শাহেদের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। একই জেলার দূর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির ওপরে মাছের খামারসহ হাঁস মুরগির খামারও রয়েছে তার। বর্তমানে তার নিজস্ব ৪টি কাভার্ড ভ্যানসহ চোর চক্রে মোট ১৫টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে। যার অধিকাংশ মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আদালতে ৬টি মামলার বিচারকার্য চলমান রয়েছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here