Home বাংলা নিউজ আপনার পকেটের ওপর ক্রমশ বাড়তে থাকা চাপের জন্য কি আইএমএফ দায়ী?

আপনার পকেটের ওপর ক্রমশ বাড়তে থাকা চাপের জন্য কি আইএমএফ দায়ী?

বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে আইএমএফ বলেছে, যদিও দেশে এখন পর্যন্ত সংকট মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়নি, তবু ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, মন্থর হয়ে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, এবং পড়তি চাহিদা মোকাবিলায় নেওয়া ব্যয় সংকোচনের কঠোর পদক্ষেপ দরিদ্রদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুইবার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। বাড়তি এই আর্থিক বোঝা স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকদের অসন্তুষ্ট করেছে। কিন্তু, এতে সন্তোষ প্রকাশ করে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘একটি ইতিবাচক/ স্বাগত পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করে।  

এদিকে বিপুল পরিসরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে মেয়াদি মূল্য সমন্বয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে- আগামী তিন বছরে জ্বালানির দাম আরো বাড়ানো হবে, এতে সাধারণ ভোক্তারা আরো মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় রয়েছেন।

আইএমএফ এর ঋণ পাওয়ার জন্য এ প্রক্রিয়া অন্যতম কাঠামোগত অংশ হলেও, এটা ছিল সরকারেরও অঙ্গীকার।  ২০১২ সালে আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা চেয়ে যা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও যা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।  

আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতে মুহিত লিখেছিলেন, ‘জ্বালানিতে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে আমরা ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় পদ্ধতি চালু করব। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মূল্য পরিবর্তন একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে সমন্বয় পর্যায়ে আনা হবে। ভর্তুকি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সারের দামও সমন্বয় করব’।

এর ১০ বছর পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতে মুস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘আগামীতে আমরা পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর সব ধরনের কাঠামোগত ভর্তুকি বন্ধের পরিকল্পনা করছি। এজন্য আমরা মূল্য সমন্বয়ের একটি মেয়াদি প্রক্রিয়া গ্রহণ করব’।

ভর্তুকির বোঝা বাড়তে থাকায়, জ্বালানির দাম বাড়ানোর মাধ্যমে এর থেকে নিষ্কৃতি চায় সরকার। কারণ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সে তুলনায় এটা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল জিডিপির দশমিক ৪ শতাংশ।

অবশ্য, খাদ্য ও সারে ভর্তুকি থাকবে, চলতি অর্থবছরে যা হবে জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে জ্বালানি, সার ও খাদ্যের ভর্তুকি বেড়ে বিপুল অংকের বা প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা হতে পারে, যা চলতি বছরে এই খাতগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত ৫৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির তিনগুণ বেশি।

পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য শূন্য কাঠামোগত ভর্তুকি অর্জনের পদক্ষেপ- বাজেটে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার চাপ কমাতে এবং আগামীতে সাশ্রয়ী, কার্যকরভাবে জ্বালানি ব্যয়ে উৎসাহিত করবে বলে আইএমএফ জানিয়েছে।

সংস্থাটির এই ভাষ্য, তিন বছরব্যাপী ঋণ কর্মসূচির সময়ে সরকারের এসব ভর্তুকি না বাড়ানো এবং পর্যায়ক্রমে কমানোর উপায় খোঁজার পাশাপাশি – সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

ফর্মুলা ভিত্তিক পেট্রোলিয়াম পণ্যের দর কার্যকর না করায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের নিম্ন দামের সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন দেশের ভোক্তারা। এতে লাভবান হয়েছে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি আমদানিকারক বিপিসি।

এরপরেও, গত দুই বছরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপই নেয় কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক বাজারের চড়া দামের সাথে তাল মেলাতে, ২০২১ সালের নভেম্বরে যা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির পর- ২০২২ সালের আগস্টে আরো প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামেও আসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি।  

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আঘাতে সবচেয়ে বিপন্ন ব্যবসা ও জনগোষ্ঠীকে রক্ষায়- সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিও রয়েছে আইএমএফের এজেন্ডায়।  

এতে সামাজিক কর্মসূচিতে আরো বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আইএফএফ রাজস্ব বৃদ্ধির পথও বাৎলে দিয়েছে। কর এবং রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কারের মাধ্যমে সরকার-ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর নাগাদ, জিডিপি-কর অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সামাজিক খাতে আরো বেশি ব্যয় ও সরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী তিন বছরে যা আরো বাড়ানো হবে।  

এজন্য আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি কর আহরণ করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ৭ শতাংশে নিতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আহরণ করতে হবে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। যেমনটা আইএমএফের সাম্প্রতিক ঋণ কর্মসূচির অভিষ্টে রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, রাজস্ব বোর্ডকে আগামী দুই অর্থবছরে ১৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, যা চলতি বছরে রয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

অতিরিক্ত ১০৫ বিলিয়ন টাকা রাজস্ব অর্জনের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো হলো- সরকারি পরিষেবার জন্য ট্যাক্স রিটার্নকে বাধ্যতামূলক করা; ২০২৬ সালের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে অতিরিক্ত তিন লাখ ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন করা।

অর্থাৎ, ভর্তুকি কমাতে এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে সংস্কারগুলো চালু করার সঙ্গেসঙ্গেই এই চাপটা ভোক্তাদের ঘাড়ে পার করে দেবে সরকার।

আমাদের কর ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি কর ছাড়, অদক্ষতা, স্বয়ংক্রিয়করণের অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম নিম্ন। শুল্ক অনেক উচ্চ থাকায় এই অনুপাত বাড়ানোর সহজ কোনো রাস্তা নেই। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আমাদের ব্যবসাগুলোকে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষম রাখতে, এসব শুল্ক যৌক্তিক করার প্রয়োজন রয়েছে। আইএমএফের নতুন ঋণ কর্মসূচিতে যেভাবে তাগিদ রয়েছে, সেভাবে বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে- এই খাতের উন্নয়নের প্রয়োজন আছে।

তাহলে আইএমএফ’কেই দোষ দিতে হবে?

এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু দাঁড়ান।

বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে আইএমএফ বলেছে, চরমতম সংকট না থাকলেও- ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, মন্থর হয়ে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, এবং পড়তি চাহিদা মোকাবিলায় নেওয়া ব্যয় সংকোচনের কঠোর পদক্ষেপ দরিদ্রদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এজন্য ভর্তুকি কমানোর ফলে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর কথা সরকারকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক ঋণদাতাটি।

আইএমএফ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি, সুবিধাভোগীর মাত্রা বাড়ানো এবং অভিষ্ট সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও বলেছে।    

এছাড়া, সামাজিক সহায়তার উদ্যোগ যুক্ত করে জাতীয় দুর্যোগ অর্থায়ন কৌশল নিতে বলেছে।

যদি ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ করা হয় এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ে, তাহলে সরকারের একটি সবল আর্থিক সক্ষমতা থাকবে, বিপন্ন জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর।  

সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে পরিত্যাগ করবে না এবং দরিদ্রদের সহায়তায় কিছু পদক্ষেপ নেবে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দশায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমস্যা ও ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে আইএমএফ। আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ঠেকাতে যেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক।  

দেশের আর্থিক খাত, বিশেষত ব্যাংকিং খাত অনিয়ম ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক অর্থনীতি ও জনসাধারণের ওপর। এই অবস্থার উন্নয়ন দরকার, কারণ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও নাগরিক মনে করছেন, অন্যের দুর্নীতির ভুক্তভোগী হচ্ছেন তারা।  

২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নন-পারফর্মিং ঋণ বেড়েছে শত শত কোটি টাকা। ২০১২ সালে খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ১০ শতাংশ; ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ তা ৯.৩৬ শতাংশ হলেও, পরিমাণে এক দশক আগের ৪২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার চেয়ে – তিনগুণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

আর্থিক খাতের এই দূরবস্থা অবসানে, আইএমএফের সাথে ঐক্যমত্য হয়েছে সরকারের। বর্তমানের ২৫ শতাংশ থেকে নন-পারফর্মিং ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার বড় প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সংস্থাটিকে। আর্থিক খাতে দুর্নীতি মোকাবিলা ও সুশাসনের উন্নতিতে কাজ করতেও সম্মতি হয়েছে।

আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে ব্যাসেল-৩ মানদণ্ডের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে তারা পুঁজির পর্যাপ্ততা এবং প্রভিশনের শর্তও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।  

মানবসম্পদে বিনিয়োগ

জনশক্তিকে সম্পদে পরিণত করার জন্য ন্যুনতম যা হওয়া দরকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ তার চেয়েও অনেক নিম্নে রয়েছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই দক্ষ কর্মীশক্তির সুস্পষ্ট সংকট রয়েছে। অর্থনীতির অন্যতম কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে এই নিম্ন উৎপাদনশীলতা।  

অথচ দীর্ঘ মেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মানব সম্পদ উন্নয়নকে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা দেবে।

কোভিড-১৯ মহামারির আগে, দেশের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছিল, কিন্তু তারপরও যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছিল না। এরপর মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে আরো বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। তার ওপর চড়া মূল্যস্ফীতি তাদের ভোগ কমাতে বাধ্য করেছে।  

আইএমএফ বলেছে, শ্রম উৎপাদনশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়াতে অপরিহার্য চালিকাশক্তি হলো- মানব সম্পদের উন্নয়ন। শিক্ষার ফলাফল উন্নয়নে নেওয়া সংস্কার প্রচেষ্টা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে কারিগরি শিক্ষার ব্যবধান কমিয়ে আনা গেলে তা দক্ষতা তৈরি এবং (কর্মসংস্থানে) অপ্রাতিষ্ঠানিকতা কমানোর সহায়ক হবে।  

তারা আরো তাগিদ দিয়ে বলেছে, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়াতে নারী কর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন এবং লিঙ্গ-সমতাকে গুরুত্ব দেওয়াও অপরিহার্য’।

আইএমএফের নথিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর (এসডিজি) আওতায় থাকা- লিঙ্গ সমতায় অগ্রগতি অর্জন, আর্থিক গভীরতা তৈরি, মানব সম্পদ উন্নয়ন- ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া কারিগরি ও আর্থিক সহায়তাকে সমর্থন করবে এই (ঋণ) কর্মসূচি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, বিশেষত নারীর ক্ষেত্রে এখনও গুরুত্বপূর্ণ’।

ঝুঁকি রয়েছে সামনে

আইএমএফ বলছে, বহুমুখী বাহ্যিক ধাক্কার মধ্যে বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো আরও তীব্র হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পর অর্থনীতির জোরালো পুনরুত্থান ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ব্যাহত হয়েছে।

আইএমএফের মতে, যদিও দেশে এখন পর্যন্ত সংকট মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়নি, তবু ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে মন্থরতা, ও ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে চাহিদা কমে যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে চায়। তবে সামাজিক ও উন্নয়ন ব্যয়, কর রাজস্ব সমবেতকরণ, রপ্তানির মাত্রা ও বৈচিত্র্যকরণ, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ, ও বিনিয়োগ পরিবেশের সক্রিয়তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশাল ফাঁক থেকে গেছে বলে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইএমএফ।

সতর্ক করে দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের কাজ যদি পুরোটা বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এটি নিম্ন প্রবৃদ্ধি, স্বল্প বিনিয়োগ, ও দুর্বল মানব উন্নয়নের গড়পড়তার চেয়েও কম সাম্যাবস্থায় পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।’

আইএমএফ বলেছে, সংস্থাটির নতুন ঋণ ব্যবস্থাপনা — ইসিএফ/ইএফএফ — রাজস্ব সমবেতকরণ, বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ইত্যাদি খাতের বিলম্বিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংস্কারে গতি আনতে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে দেশের উচ্চ মধ্যম আয়ের পর্যায়ে পৌঁছানোর ভিত সূচিত হবে।

এক দশক আগে যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে মন্থর পুনরুদ্ধারের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতি টের পাচ্ছিল, তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা এখন একাধিক বৃহৎ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছি, যা একটি প্রকৃত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অর্থায়নের প্রয়োজন বাড়িয়েছে। এটা দীর্ঘায়িত হতে পারে।’

২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও ভিশন-২০২১ প্রোগ্রাম — এ দুই প্রধান লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সে সময় মুহিত আইএমএফের কাছে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সহায়তা চান।

এখন সংকট আরও গভীরে প্রোথিত। আর সামনে রয়েছে আরও বড় দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা — ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণ, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা লাভ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া।

মুস্তাফা কামাল এখন আইএমএফের ২০২৩-২৬ সালের নতুন ঋণ কর্মসুচিকে কেন্দ্র করে তার আশার বীজ বুনছেন।

‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও আমাদের রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে আবার গঠন করার লক্ষ্যে সাহসী নীতি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে এ ৪২ মাস মেয়াদি কর্মসূচিটি গড়ে উঠেছে। একইসঙ্গে, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের ভিত স্থাপনে গঠনগত ম্যাক্রো-ক্রিটিক্যাল সংস্কার কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হবে,’ ডিসেম্বরে আইএমএফকে দেওয়া তার চিঠির মেমোরেন্ডাম অব ইকোনমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল পলিসিজ (এমইএফপি) সংযুক্তিতে লিখেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here