Home বাংলা নিউজ জাহাজীকরণের বাড়তি সময় ভোগাচ্ছে পোশাক খাতকে

জাহাজীকরণের বাড়তি সময় ভোগাচ্ছে পোশাক খাতকে

► গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকা এবং পোশাকের প্রধান কাঁচামালের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ ► গ্রিন কারখানায় বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ, এ সফলতার সুবিধা মিলছে না

দেশের তৈরি পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়লেও লিড টাইম (পণ্য জাহাজীকরণের সময়) বেশি লাগায় ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এ জন্য বড় চ্যালেঞ্জ গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি আর পোশাকের প্রধান কাঁচামালের অভাব বলে মনে করেন এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে দিনব্যাপী সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামের ২০২৩ সমাপনী অধিবেশনে তাঁরা এই মন্তব্য করেন।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দুটি বিষয় সাসটেইনেবিলিটি গতিশীল করতে পারে। প্রথমত, সরকারি নীতি। এটায় আমরা প্রস্তুত। দ্বিতীয়ত, সবার সহযোগিতা। তিনি সবাইকে পোশাক খাতে টেকসই বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা কারখানায় শতভাগ কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। পরিবেশবান্ধব কারখানায় আমরা শীর্ষে। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি গ্রিন কারখানার মধ্যে ৫৩টিই বাংলাদেশের। আরো ৫৫০টি কারখানা গ্রিন কারখানা হওয়ার পথে রয়েছে। সুতরাং গ্রিন কারখানায় সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।’

তিনি আরো বলেন, ‘সার্কুলার অর্থনীতি গ্রিন পরিবেশ বাড়াতে সহায়ক হবে। উৎপাদনপ্রক্রিয়া টেকসই করা আজকের ফ্যাশনের প্রধান লক্ষ্য। আমরা কান্ট্রি ও ব্লকভিত্তিক নীতিমালা চাই না। আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ চাই। ব্যবসার টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতের দায় শুধু উৎপাদকের নয়, সরকার ও ক্রেতাগোষ্ঠীরও রয়েছে।’

সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বলেন, লিড টাইম বেশি হওয়ার কারণ দেশে পোশাক খাতের প্রধান কাঁচামালের অভাব, গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। মাতারবাড়ী ডিপ সি পোর্ট চালু হলে লিড টাইম কমে আসবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। কেননা মেড ইন বাংলাদেশ দেখলেই ক্রেতারা মনে করে সস্তা পণ্য। এ অবস্থায় তিনি সরকারের নীতি সহায়তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনায় কোনো শ্রমিক মারা যাননি। এই সময়ে শ্রমিকরা কারখানা চালাতে সহায়তা করেছেন। রানা প্লাজার পর ১৯২টি গ্রিন কারখানা হয়েছে। আরো ২০০ পাইপলাইনে নেই। কিন্তু ক্রেতারা এর কোনো মূল্যায়ন করেননি। তাঁরা এ জন্য কোনো বাড়তি মূল্য দেন না। শুধু তৈরি পোশাক কারখানায় সাসটেইনেবল প্রাইসের দাবি জানিয়েছেন।

শ্রমমানের অনেক ঘাটতি আছে উল্লেখ করে ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের শ্রমমানের উন্নতি হলেও এখনো অনেক ঘাটতি আছে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ মেলে না। বিশেষ করে ইপিজেড এলাকার শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পান না। তাঁদেরও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর আরো উন্নতি দরকার আছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টের প্রধান গন্তব্য হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা এই সম্পর্ক বাড়াতে চাই। আমরা সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। টেকসই উন্নয়নে শ্রমিকের ভূমিকা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই। তবে আমদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে—বাংলাদেশে এখনো অনেক শ্রমিক তাঁদের অধিকার পাচ্ছেন না। আমরা মনে করি, টেকসই উন্নয়নের শর্ত সবার অধিকার নিশ্চিত করা। লেবার প্রটেকশন পণ্যের ন্যায্য দাম পেতে সাহায্য করবে। শ্রমিক অধিকারে ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, এটা ভালো।’

তৈরি পোশাক শিল্প খাত নিয়ে চারটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here