Home বাংলা নিউজ পোশাক রপ্তানি খাতে নির্বাচনের প্রভাব

পোশাক রপ্তানি খাতে নির্বাচনের প্রভাব

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। তফসিল ঘোষণার আগের থেকেই বিরোধীদলগুলো রয়েছে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে। এ অস্থিরতার মধ্যে উত্তাল হয়ে ওঠে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় সহিংসতায়। এ পরিস্থিতিতে পোশাক রপ্তানি কমার পাশাপাশি ভাটা দেখা দিয়েছে মোট রপ্তানি আয়েও। বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বমন্দার কারণে বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্প। রপ্তানি আয় ধরে রাখাও এখন চ্যালেঞ্জ খাতটির জন্য। এ অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ধস ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পকে আন্দোলনের বাইরে রাখার কথা বলছেন তারা। পাশাপাশি হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কোনো কর্মসূচির বিরোধিতা করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও রয়েছে এর প্রভাব। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ সংকটে। দেখা দেয় ডলার সংকট। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়ও বাড়ে অস্বাভাবিকহারে। আমদানি কমে যাওয়ায় এরইমধ্যে কমেছে উৎপাদন। বৈদেশিক রপ্তানিও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। 
ইপিবির তথ্য বলছে, তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমায় চলতি বছরের অক্টোবরে মোট রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি আয় এসেছে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের (এক বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় কম। এরইমধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও নাজুক করে তুলতে পারে।
শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পরিস্থিতির মধ্যে দেশে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। এর প্রভাব পণ্যের বাজারমূল্য ও রপ্তানির ওপর পড়ছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারলে ক্রয়োদশ বাতিলের ঝুঁকিতে পড়বেন উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সব পণ্যসামগ্রীর ঊর্ধ্বমূল্যের প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেওয়া এ খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতারাও পণ্য কেনা কমিয়েছেন। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে শঙ্কা আরও বাড়বে। 
উদ্যোক্তারা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, বেকার হবেন হাজার হাজার শ্রমিক। এখন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের মধ্যেও আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম চলছে। ব্যবসায়ীরা ওভারটাইম করেই উৎপাদন ঠিক রেখেছেন। তবে ধারাবাহিক আন্দোলন হলে বা হরতাল-অবরোধ হলে অশনি সংকেত দেখা দেবে পোশাক শিল্পে। 
শিল্প উদ্যোক্তা বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, হরতাল-অবরোধসহ যে কোনো অস্থিরতাই আমদানি-রপ্তানির জন্য ভালো নয়। এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। রপ্তানিতে আসলে ঘণ্টার হিসাব। সেক্ষেত্রে এক ঘণ্টা উৎপাদন না হলে এক ঘণ্টা লোকসান। এখন পর্যন্ত সমস্যা হরতাল-অবরোধে যেসব হচ্ছে তা অনেকটাই ম্যানেজ করা যাচ্ছে, যদিও কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আপাতত যা হয়েছে তা ওভারটাইম করে বা দু-একদিন বাড়িয়ে পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তবে এর চেয়ে বেশি হলে সমস্যা, ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে সমস্যা হবে। শিপমেন্ট সঠিক সময়ে হবে না, গাড়িভাড়া বেড়ে যাবে, গাড়িও ঝুঁকিতে থাকবে। 
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাই বড় শঙ্কা। এটা দীর্ঘস্থায়ী হলে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মৌসুমের অর্ডার কমে যেতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের অর্ডার বাড়াতে তৎপর ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়াসহ প্রতিযোগী দেশগুলো। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ধস ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধ পোশাক কারখানা চালু ও কারখানায় নতুন নিয়োগ হবে। তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। হতাহতও হয়েছেন অনেক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী। 
সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বেতন কেন্দ্র করে গার্মেন্ট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা হামলা হওয়াটা কাম্য নয়। আমাদের পোশাকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় ধাক্কা তৈরি হবে জাতীয় অর্থনীতিতে। আমরা এখন ডলার সংকটে আছি। ডলার আয়ের অন্যতম মাধ্যম গার্মেন্ট খাত। এ খাত টিকিয়ে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। News Sources : swadeshpratidin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here