বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইলের বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসেই নেতিবাচক ধারায় যাচ্ছে এ খাতের রপ্তানি। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই আগের বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশের বেশি রপ্তানি কমেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, হোম টেক্সটাইল ফাস্ট ফ্যাশনের দ্রুত পরিবর্তনশীল আইটেমের মতো কোনো আইটেম নয়। যেমন অনেক পরিবার সারা বছর শুধু একটি বিছানার চাদর দিয়েই চলে। তাই হোম টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কেনাকাটার গতি হয় ধীর।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) হোম টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বিগত বছরের একই সময়ের ৫১ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তুলনায় ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এ সময়ে মোট রপ্তানিতে এ খাতের অবদান ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠেছে।
ইপিবির তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১৩ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ১০৯ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য, যা আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় ১.৬২ বিলিয়ন ডলার বা ৩২.৪৭ শতাংশ কম। এই খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি কমেছে।
এদিকে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্যের দাম, সুতার দাম, পরিবহন ও জ্বালানি খরচের মতো অন্যান্য কারণে হোম টেক্সটাইল পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, উৎপাদন খরচ কমানো না গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি কেজি সুতার দাম ৪৫ সেন্টের বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারা তৈরি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন না। ফলে রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়ছেন। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারে হোম টেক্সটাইল পণ্যের দাম আবার ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
ইপিবির পণ্যভিত্তিক রপ্তানি কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বরের এ সময়ের ৮টি পণ্য খাত ওভেন পোশাক, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা এবং প্রকৌশল দ্রব্য থেকে আয় হয়েছে ২০ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৯৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
রপ্তানির তথ্যে দেখা যায়, গত পাঁচ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছু পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। নিট পোশাক, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজ ও কাগজপণ্য, ইলেকট্রিক পণ্য, কপার, ওয়্যার, গুঁড়ো মসলা, জীবন্ত মাছ, সিমেন্ট, চা, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, শাকসবজি, ওষুধ, ফলমূল, হ্যান্ডিক্র্যাফটস, রাবার, কেমিক্যাল প্রডাক্টস, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস, চামড়াজাত পণ্য, চামড়া ইত্যাদি পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে।
তবে বেশিরভাগ পণ্যেরই রপ্তানি আয় কমেছে। যেমন : ওভেন পোশাক, ক্যাপ, তামাক, সিরামিক প্রডাক্টস, ফার্নিচার, কার্পেট, চিংড়ি মাছ, বাইসাইকেল, জুতা (চামড়া ছাড়া), প্রকৌশলী যন্ত্রাংশ, শুকনো খাবার, টেরি টাওয়েলস, হোম টেক্সটাইল, চামড়ার জুতা, জুট সকস অ্যান্ড ব্যাগ, ক্র্যাবস, জাহাজ, কাঁচা পাট, গলফ সাফট, নিট ফেব্রিকস, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন, উইগস ও মানুষের চুল ইত্যাদি রপ্তানি আয় এখনো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।
নিট পোশাক খাতে জুলাই-নভেম্বর সময়ের রপ্তানি আয় হয়েছে ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার আয়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মোট রপ্তানিতে এ খাতের অবদান ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ওভেন পোশাক খাতে এ সময় রপ্তানি আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা বিগত বছরের একই সময়ের ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন আয় অপেক্ষা ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। এ সময় মোট রপ্তানিতে এ খাতের অবদান ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।
চামড়া-চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাতে এ সময় রপ্তানি আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৭.০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত বছরের একই সময়ের ৫৩৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের তুলনায় ২০.৫৫% কম। ওই সময়ের মোট রপ্তানিতে এ খাতের অবদান ১.৯২%।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের ২০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার আয়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। এর মধ্যে ক্রাস্টেসিয়ানস খাতে বিগত অর্থবছরের রপ্তানি আয় ১৬১.৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে বিবেচ্য সময়ে এ পণ্যটির রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এ সময়ের মোট রপ্তানিতে হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ খাতের অবদান শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ।