দেশের পোশাক শিল্পের মালিকদের বৃহৎ সংগঠন বিজিএমইএ প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী ‘ক্যারিয়ার সামিট অ্যান্ড ফেস্ট-২০২৩’ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে।
আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরায় ১৭ নম্বর সেক্টরে বিজিএমইএ কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় এ ‘চাকরি মেলা’ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি এ সময় বলেন, উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্তই হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তাই আমরা শিল্পে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী এ ক্যারিয়ার সামিট অ্যান্ড ফেস্ট আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ইভেন্টের লক্ষ্য হচ্ছে পোশাক শিল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট এবং নেতৃস্থানীয় কোম্পানির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের পোশাক শিল্প বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করা, যাতে করে তারা দক্ষতাসমৃদ্ধ হয়ে ক্যারিয়ারে সফল হতে পারে।
তিনি জানান, ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বিজিএমইএ ক্যারিয়ার সামিট অ্যান্ড ফেস্টের উদ্বোধন হবে। ইভেন্টে ৪০টিরও বেশি স্বনামধন্য নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল কলেজ, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শেষ বর্ষের এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যারা পোশাক শিল্পে চাকরি করতে ইচ্ছুক, তাদের সবার জন্য এখানে অবারিতভাবে সিভি ড্রপ এবং অন স্পট ইন্টারভিউ প্রদানের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, নতুন বছরে প্রতি মাসেই বিজিএমইএ এ ধরনের ক্যারিয়ার সামিট আয়োজন করবে।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও জানান, ক্যারিয়ার সামিটে বিভিন্ন গ্লোবাল ব্র্যান্ড বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। ইভেন্ট চলাকালে তারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করবেন। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিবেন। এই ইভেন্টটি সামগ্রিক শিল্প নিয়ে মতবিনিময় এবং অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতমূলক মনোভাব গড়ে তুলবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্যারিয়ার সামিট শিক্ষার্থী এবং নিয়োগদানকারী কোম্পানিগুলোকে একই ছাদের নিচে আনবে, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সম্ভাব্য সুযোগ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। এই ইভেন্ট থেকে অংশগ্রহণকারী গ্রাজুয়েটরা জানবে বর্তমানে পোশাক শিল্পে চাকরির চাহিদা কেমন ধরনের এবং তারা সে অনুযায়ী নিজেরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে। আমাদের দেশে অনেক গ্রাজুয়েট আছে, তারা এ বিষয়ে প্রকৃত ধারণা না থাকার কারণে যোগ্য স্থানে যেতে পারছে না। চাকরির বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প তার যাত্রাপথে অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে আজ ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক রপ্তানি টার্নওভারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। জিডিপিতে ১১ শতাংশ অবদান রাখা পোশাক শিল্প প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ মিলে প্রায় ২ কোটির মানুষের জীবন-জীবিকা পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।
পোশাক শিল্পের দৃপ্ত পদচারণা, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবময় পরিচিতি এনে দিয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে আর্থসামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
তিনি বলেন, গত ৪৫ বছরে, আমরা পোশাক ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছি। বিগত এক দশকে আমরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, এই সামিটের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন অনুষদের ডিনরাও উপস্থিত থাকবেন। ফলে শিল্প-একাডেমিয়া সংযোগ তৈরিতে এই ইভেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে বৈচিত্র্যময় পণ্যগুলোতে যাওয়ার জন্য আমাদের সক্ষমতার উপর। আর এর জন্য উন্নত দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে শিল্পের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে এবং এ সংযোগে ব্যবহারিক শিক্ষাকে আরও নিবিড়ভাবে একীভূত করতে হবে। বিজিএমইএ ক্যারিয়ার সামিট ও ফেস্টের অন্যতম উদ্দেশ্যও এটি। আমি আশা করি, এই উদ্যোগটি অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, বিজিএমইএর পরিকল্পনা রয়েছে নতুন বছরে থেকে প্রতি মাসেই কোনো না কোনো সেন্টারে এ ধরনের ইভেন্ট আয়োজন করা। News Sources : khaborerkagoj