যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শীর্ষ ডেনিম সরবরাহকারী হওয়ায় বিশ্ববাজারে আরও বেশি রপ্তানির জন্য এই খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ইইউয়ে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ। এই অঞ্চলে প্রতি তিন জনের একজন বাংলাদেশে উৎপাদিত ডেনিম প্যান্ট পরেন।
তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাড়ে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের ডেনিমের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বর্তমানে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য সরবরাহ করছেন।
২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডেনিমের বাজার ৭৬ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বছরে চার দশমিক আট শতাংশ হারে বাড়বে।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা ডেনিম খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দেশে ইতোমধ্যে ৪২টি আধুনিক কারখানা আছে। এ থেকে প্রতি বছর ৯০ কোটি মিটারের বেশি ডেনিম কাপড় উৎপাদন সম্ভব।
প্রায় এক দশক আগেও ১২টি কারখানায় ডেনিম উৎপাদনে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট হাজার কোটি টাকা। তবে গত কয়েক বছরে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম সরবরাহে বাংলাদেশ প্রতিবেশী চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে ৭০ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে হবিগঞ্জে দুটি কারখানার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, জাপান, চীন, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশি ডেনিমের ক্রমবর্ধমান গন্তব্যস্থল।
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ডেনিম জিন্স সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ডেনিম উৎপাদন ১২ শতাংশের বেশি বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
তিনি টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি বছরে ডেনিমের চাহিদা গত বছরের তুলনায় ভালো। এ বছর এর রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্যাশনে পরিবর্তন এবং ডেনিম আরও নরম ও আরামদায়ক হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বাড়ছে।
বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ডেনিমের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করায় এ খাতে নতুন বিনিয়োগ ও পুনর্বিনিয়োগ চলমান আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে বেশিরভাগ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদার কারণে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে।’
তার মতে, স্বল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হয় বলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ডেনিমের চাহিদা অনেক।
বিটিএমএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে ডেনিম খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ইইউতে সাড়ে ৮৮ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছে।’
২০২২ সালে ইইউয়ে ডেনিম চালান থেকে আয় হয়েছে এক দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল এক দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এমনকি, ২০২০ সালের করোনা মহামারির বছরেও বাংলাদেশ থেকে ইইউয়ে ডেনিম রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার।
একইভাবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রেও ডেনিম রপ্তানি বেড়েছে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার ডলারের ডেনিম রপ্তানি করেছিল।
ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবেল আরও বলেন, ‘২০২২ সালে ডেনিম রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৪৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালে ছিল ৭৯৮ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার ও ২০২০ সালে ছিল ৫৬ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ডলার।’
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ডেনিমের ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে। এটি দেশে এর উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়ে দিয়েছে।’
তিনি জানান, ডেনিম এখন নিটওয়্যার আইটেমগুলোতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।