Home বাংলা নিউজ নিলামে উঠছে একসময়ের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ওপেক্সের কার্যালয়

নিলামে উঠছে একসময়ের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ওপেক্সের কার্যালয়

দেশের একসময়কার শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ওপেক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয় নিলামে তুলতে যাচ্ছে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি)। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৪ কাঠা বা ২৩ দশমিক ৩৫ ডেসিমেল জমিও নিলামে তুলছে ব্যাংকটি। ওপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিনহা ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংকটি।

এসসিবি গত রোববার সিনহা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এতে বলা হয়, সিনহা ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান সিনহা ২০১৩ সালে দুই দফায় সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেন। বর্তমানে সেই ঋণ সুদ-আসলসহ ৫২ কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আনিসুর রহমান সিনহা আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের একজন সফল উদ্যোক্তা। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত তাঁর মতো প্রবীণ উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো।

এস এম মান্নান, সভাপতি, বিজিএমইএ

বকেয়া ঋণ ও সুদ আদায়ে এসসিবি ওপেক্স গ্রুপের মহাখালীতে ৮ কাঠা ৪ ছটাক জমির ওপর অবস্থিত প্রধান কার্যালয় ভবনের ১৪টি তলা নিলামে তুলবে। সেগুলো হচ্ছে দুটি ভূগর্ভস্থ তলা, নিচতলা, প্রথম, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, তেরো, চৌদ্দ, পনেরো, ষোলো ও সতেরোতম তলা। এ ছাড়া মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশন এলাকার ১৪ কাঠা জমি নিলামে তোলা হবে। নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৬ জুনের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলেছে এসসিবি।

ওপেক্স গ্রুপ দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শুরুর দিকের একটি প্রতিষ্ঠান। আশির দশকে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন আনিসুর রহমান সিনহা। পাশাপাশি সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের মাধ্যমে কাপড়সহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নেন তিনি। পরে দেশের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুরে বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনের বড় একটি কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছিল ওপেক্স গ্রুপ। সেখানে শার্ট, সোয়েটার, ডেনিম, নিট পোশাক ইত্যাদি তৈরি হতো। ৪৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা ওই কমপ্লেক্স এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র ও পোশাক কমপ্লেক্স হিসেবেও স্বীকৃতি পায়। রানা প্লাজা ধসের পর থেকে ব্যবসা হারাতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। করোনার সময় বড় ধাক্কা খায় তারা।

অব্যাহত লোকসানের মুখে ২০২১ সালের অক্টোবরে কাঁচপুর ইউনিটের সব কারখানা একযোগে বন্ধ করে দেয় ওপেক্স কর্তৃপক্ষ। তখন তারা বলেছিল, ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের স্বত্বাধিকারী ২০১২ সাল থেকে কাঁচপুরের সব কারখানায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও ঋণ ও জমিজমা বিক্রির মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ দিয়ে কারখানাগুলো চালু রেখেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে ক্রয়াদেশের অভাব দেখা দেয়। তা ছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিম্নদক্ষতা ও সময়ে সময়ে কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কারণে কারখানার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় মালিকের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে কারখানাগুলো চালিয়ে রাখার মতো আর্থিক সংগতি বা সামর্থ্য নেই। ফলে ওপেক্স গ্রুপের কাঁচপুর ইউনিটের সব পোশাক কারখানা এবং ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২০২১ সালে।

কাঁচপুর ছাড়াও মিরপুর ও আদমজী ইপিজেডেও ওপেক্স গ্রুপের কারখানা রয়েছে। গ্রুপটির ১৬টি কারখানা তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য। বর্তমানে গ্রুপটির কোনো কারখানা তৈরি পোশাক রপ্তানির উদ্দেশ্যে কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতা (ইডি) নিচ্ছে না—এমন তথ্যই জানালেন বিজিএমইএর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। 

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে আনিসুর রহমান সিনহা ভাইয়ের সব কটি কারখানা বন্ধ। তবে তিনি মিরপুর ও আদমজীর কারখানা চালুর চেষ্টা করছেন। এসসিবি ব্যাংকের সম্পত্তি নিলামের বিষয়টি তিনি সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান বিকেএমইএর এই নেতা।

জানা যায়, আনিসুর রহমান সিনহার বয়স এখন ৮০–এর কোঠায়। তাঁর একমাত্র কন্যা দেশের বাইরে থাকেন। ফলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের একসময়ের সফল ব্যবসায়ীর গড়ে তোলা ব্যবসার হাল ধরেনি দ্বিতীয় প্রজন্ম। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি পোলট্রি ব্যবসাও আছে তাঁদের। ২০০১ সালে আনিসুর রহমান সিনহা ফাস্ট ফুড চেইন বিএফসি প্রতিষ্ঠা করেন।

এসসিবি ব্যাংকের সম্পত্তি নিলামের বিষয়ে জানতে চেয়ে আনিসুর রহমান সিনহার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনিসুর রহমান সিনহা আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের একজন সফল উদ্যোক্তা। পোশাক খাতকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসার পেছনে তাঁর অবদান রয়েছে। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগের মতো ভালো অবস্থানে নেই। বর্তমানে পরিস্থিতিতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত তাঁর মতো প্রবীণ উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ব্যবসা থেকে প্রস্থানের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। বহুদিন ধরে আমরা এ বিষয়ে নীতিমালার দাবি করছি। ব্যবসায়ীরা সফল হবেন, আবার ব্যর্থ হবেন। ফলে প্রস্থান নীতিমালা না থাকাটা অন্যায়।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here