রানাপ্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি উঠিয়ে নিয়ে টিকফা চুক্তিতে বাণিজ্য সমতা করতে চেয়েছিল। তবে এ চুক্তির ১১ বছরেও তেমন কোনো সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো শ্রমমান নিয়ে প্রতিনিয়তই প্রশ্ন তুলে চাপে রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ইতিহাস প্রায় সাড়ে চার দশকের। সত্তর দশকের শেষের দিকে দেশের তৈরি পোশাক প্রথম ফ্রান্সে রপ্তানি হয়। মাত্র ১০ হাজার পিস শার্টের ওই চালানের দাম ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ফ্রাঁ, বর্তমান টাকার অঙ্কে যা ছিল ২৩ লাখ ৪০ হাজার।
মাত্র ২৩ লাখ টাকার বাজার এখন দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত, যার আকার ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বাজারে প্রবেশ করাটা খুব একটা সহজ ছিল না। বাজার ধরার সে লড়াইয়ে ক্রেতাদের নানা শর্তের বেড়াজাল ছিল। যা পোশাক রপ্তানির ৪৬ বছরেও কমেনি বরং এর ধরন বদলেছে, বেড়েছে শর্তের তালিকা।
শর্ত মানলেও কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের যেন বরাবরই অনীহা। দোহানীতি অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭ শতাংশ পণ্যে জিএসপি দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে তা কখনোই মেলেনি। উল্টো শ্রমমান, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ২০১৩ সালে রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির পর যেসব পণ্যে জিএসপি ছিল তাও উঠিয়ে নেয়া হয়। তবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের জন্য সে বছরের নভেম্বরে আলোচিত টিকফা চুক্তি সই হয়। কিন্তু ১১ বছরেও সেই চুক্তির কি কোনো সুবিধা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারে আমরা উন্নীত করেছি। আমেরিকার মার্কেটে আমাদের অবস্থান ভিয়েতনামের চেয়ে খারাপ নয়। আর আমরা যে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি না, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে যেসব পোশাক তৈরি করা হয়, সেসব পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পর বন্দরে তুলা ফিউমিগেশন পদ্ধতি বা বিষবাষ্পীকরণের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়ার পর আমদানিও বেড়েছে। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় ও বন্দরে পাঁচদিন অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজার হিস্যা ছিল ৯ শতাংশ। ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিলের পর তা এখন প্রায় ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাহলে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে বাধা কিসে?
মোহাম্মদ আলী খোকন আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করে আসছি। কিন্তু আমাদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখেনি।’
ঢাকায় সবশেষ টিকফা বৈঠকেও ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন বাস্তবায়ন, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করলে কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ দেশের শ্রম অধিকার নিয়ে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়।
অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে রাতারাতি বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আয়ের ৯০ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এ বাজারে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এওয়াইএইচ