Home বাংলা নিউজ আবার কর্মচাঞ্চল্য শিল্পকারখানায়, ক্ষতি পোষানো নিয়ে দুশ্চিন্তা

আবার কর্মচাঞ্চল্য শিল্পকারখানায়, ক্ষতি পোষানো নিয়ে দুশ্চিন্তা

কারফিউর কারণে বন্ধ থাকা শিল্পকারখানার একটা অংশ গত মঙ্গলবার চালু হয়েছিল। বাকি থাকা অধিকাংশ কারখানা গতকাল বুধবার উৎপাদনে ফিরেছে। ফলে চার–পাঁচ দিন পর দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোয় কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে।

জানা যায়, ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহের ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকার তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, ইস্পাতসহ অন্যান্য শিল্পকারখানায় গতকাল সকাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়। অধিকাংশ শ্রমিকই কাজে যোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রামের অধিকাংশ কারখানা গত মঙ্গলবার উৎপাদন শুরু করেছিল। নগরের কর্ণফুলী ও চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) কারখানাগুলো গতকাল চালু হয়েছে।

সব পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এখন সময়মতো আমদানি করা কাঁচামাল বুঝে পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহসভাপতি, বিজিএমইএ

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, সব পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এখন সময়মতো আমদানি করা কাঁচামাল বুঝে পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চান না তাঁরা। কারণ, ইতিমধ্যে ৪০-৫০ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। এটার জের সামলাতেই হিমশিম খেতে হবে অনেককে।

এদিকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে পোর্ট ও শিপিং ড্যামারেজ চার্জ মওকুফের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত এ চার্জ আরোপ করা উচিত হবে না।

শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপের ধামরাই ও মিরপুরের কারখানা গতকাল চালু হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত চার দিনের ক্ষতি পোষাতে মাসখানেক সময় লাগবে।

স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শীতের পোশাক বেশি রপ্তানি করি। এখন আমাদের কাজের ভরা মৌসুম। সাধারণত আমরা ৯-১০ ঘণ্টা উৎপাদন করি। গত চার দিন উৎপাদন করতে পারিনি। তাই শুক্রবারও কাজ করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করব। এ ছাড়া প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে বেশি কাজ করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করা হবে। তাতেও এক মাস সময় লাগবে।’

গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় আরেক শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক তুসুকা গ্রুপের পাঁচটি কারখানাও গতকাল উৎপাদনে ফিরেছে। এসব কারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতির হার ছিল ৯১ শতাংশ। কারফিউর কারণে ওভারটাইম শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে তুসুকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদন মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কারখানায় ইন্টারনেট চালু না হওয়ায় পণ্য পাঠানো যাবে না। কারণ, পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনভিত্তিক। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরেও আমদানি-রপ্তানির পণ্যের জট লেগে গেছে।

গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার সায়েম ফ্যাশন নামের সোয়েটার কারখানাটি দুই শিফটে দৈনিক ২২ ঘণ্টা চালু থাকে। গত কয়েক দিনের ক্ষতি পোষাতে কারফিউর মধ্যে পুরোদমে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সায়েম ফ্যাশনের পরিচালক আবরার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমরা কমপক্ষে এক সপ্তাহ পিছিয়ে পড়েছি। সে কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা পণ্য রপ্তানির জন্য বাড়তি সাত দিন সময় চেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প পুলিশ থেকে আমাদের কারখানায় শ্রমিকদের প্রবেশ করানোর সময় বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আমরা সেটি মেনে চলার চেষ্টা করছি।’

কারফিউর কারণে বন্ধ থাকা নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশন কারখানাও উৎপাদন শুরু করেছে। গতকাল সকাল নয়টায় তাদের ৯০ শতাংশ কর্মী কাজে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের ৮০০ পোশাক কারখানা আবার চালু হয়েছে। কারফিউর কারণে কারখানা বন্ধ থাকার সময়ের মজুরি শ্রমিকেরা পাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে ওভারটাইম করে এ সময়ের ছুটি সমন্বয় করা হবে।

তৈরি পোশাক কারখানার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে আদজি ট্রিমস। তুরাগ ও ধামরাইয়ে তাদের দুটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। তুরাগের কারখানায় ৬০ শতাংশ কর্মী উপস্থিত হলেও ধামরাইয়ে ৯৬ শতাংশই কাজে যোগ দেন।

জানতে চাইলে আদজি ট্রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘সরবরাহব্যবস্থায় কিছু ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে। আশা করছি, দু–এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

গাজীপুরের টঙ্গীর মাজুখানে এক্সক্লুসিভ ক্যান নামের কারখানাও উৎপাদনে ফিরেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙের ছোট-বড় ক্যান, আইসক্রিমের বক্স, মবিলের ক্যান, ওষুধের বোতল তৈরির এ কারখানায় দুই শিফটে কাজ হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাতের শিফটে কাজ করা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এক্সক্লুসিভ ক্যানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসির প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার কর্মীরা প্রায় সবাই উপস্থিত হয়েছেন। গতকাল ইন্টারনেট না থাকায় দাপ্তরিক কাজে কিছু সমস্যা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here