তৈরি পোশাকের নতুন বাজারের শীর্ষ ১৫টি দেশে ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি থাকলেও কমেছে পার্শ্ববর্তী ভারতে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ। এছাড়া পোশাকের প্রধান বাজার ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সার্বিকভাবে কমেছে পোশাক রপ্তানি। এজন্য ন্যায্যমূল্য ও পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতার পাশাপাশি কাস্টমস সমস্যাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারের মোট রপ্তানি আয়ের ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারই ছিল তৈরি পোশাকের। আর নতুন বাজার থেকে পোশাকের আয় ছিল ৮৩৭ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আর সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে তৈরি পোশাকের প্রায় ১৯ শতাংশ গেছে অপ্রচলিত বাজারের শীর্ষ ১৫টি দেশে। যেখানে এগিয়ে আছে, জাপান। আগের অর্থবছরের তুলনায় এ বাজারে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ ১.৮৩%। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ায় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ । তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ায় বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ ।
তৈরি পোশাকের অপ্রচলিত বা নতুন বাজারের মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। এসব বাজারে রপ্তানি ঠিকঠাক চললেও হঠাৎ করে কমেছে ভারতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথমবার ভারতে পোশাক রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে।
যেখানে ১১ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পোশাক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পোশাক। এই হিসাবে জুলাই থেকে মে ১১ মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
শুধু কি তাই? ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাসভিত্তিক হিসাবে ৫ মাসে কমেছে পোশাক রপ্তানি। অক্টোবরে কমেছে প্রায় ১৪%, নভেম্বরে ৭%, ডিসেম্বরে ২%, এপ্রিলে ১% আর মে মাসে কমেছে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ। সবমিলিয়ে গেল ১১ মাসে আশানুরূপ হয়নি তৈরি পোশাক রপ্তানি। এসময়ে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ বাজারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। যা সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে মাত্র ২ শতাংশ। ইইউর শীর্ষ গন্তব্য জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। ইইউ ছাড়া কানাডার বাজারেও পোশাক রপ্তানি কমেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ কম। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নেতিবাচক ধারা থেকে বের হতে পারছে না তৈরি পোশাক খাত। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে এই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের তুলনায় নতুন বাজারের আকার ছোট, তাই পোশাকের নতুন গন্তব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি ধারা ধরে রাখতে নতুন বাজারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো হবে। এছাড়া রপ্তানি ধারা বজায় রাখতে ২০২৬ সালের পর মুক্তবাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।’
তবে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অনেকটাই বেখবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ জানা নেই বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
এ অবস্থায় শুধু অপ্রচলিত বাজার নয়, প্রচলিত বাজারেও আগের মতো প্রতিযোগিতা করতে পারছে না দেশের তৈরি পোশাক। ফলে ইউরোপেও রপ্তানি কমেছে। সমস্যা সমাধানে সরকারের গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের পাশাপাশি নীতিগত সহযোগিতা না কমিয়ে বরং বাড়ানোর দাবি খাতসংশ্লিষ্টদের।
এভিএস