কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত ও দেশব্যাপী চলমান কারফিউর কারণে পোশাকশিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন রপ্তানিকারকরা। পাশপাশি বিদেশি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য তাদের ওপর চাপ দিচ্ছে।
চার দিন কারখানা বন্ধ থাকায় পোশাক রপ্তানিকারকরা সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও উৎপাদন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, উৎপাদন বাড়িয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
গত সপ্তাহের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে ১৮ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তারা বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও জাহাজিকরণে বাধা এমন একসময়ে এসেছে যখন এই খাতটি বিশ্ববাজারে ব্যবসা ফিরে পেতে চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক দুই শতাংশ কমে ৩৩ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারাও দ্রুত পণ্য পাঠানোর জন্য পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ দিচ্ছেন। কারণ পশ্চিমে সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাসের আগে তাদের দোকানগুলো নতুন ডিজাইনের পণ্য দিয়ে ভরতে হবে। সে সময় সেখানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ক্রিসমাসের পণ্য জাহাজিকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় টি-শার্ট ও পোলো শার্ট পাঠানো এক রপ্তানিকারক বলেন, ক্রেতারা সংকটের কথা শুনতে চান না। তারা চান সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা হোক। করোনা মহামারি, চলমান রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমের ক্রেতাদের ওপর বিশাল মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ ব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে লোহিতসাগরে চলমান সংকটের কারণে চলতি বছর পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আরো বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই সংকটের কারণে বাণিজ্যিক জাহাজ পরিচালন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।
এই সংকটের কারণে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পণ্য চালানে আগের সময়ের তুলনায় কমপক্ষে এক মাস বেশি সময় লাগছে। বাণিজ্যিক জাহাজগুলো সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করতে না পারায় দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরিপ হয়ে অতিরিক্ত সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার ঘুরে চলতে বাধ্য হচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক পোশাক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো বেশি টাকা খরচ করে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বলছে যাতে সময়মতো পণ্য দোকানগুলোয় পৌঁছাতে পারে। এক কেজি পোশাক যদি নৌপথে ইউরোপে পাঠানো হয়, তাহলে খরচ পড়ে প্রায় ১০ সেন্ট বা এরও কম। কিন্তু, একই পরিমাণ পণ্য ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে পাঠালে খরচ হয় চার ডলারের বেশি। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেন, শুক্রবার কারখানা খোলা রাখার চিন্তা করছেন, যাতে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যায়। এছাড়াও, কার্যাদেশ বাতিল ও ব্যয়বহুল উড়োজাহাজে পণ্য চালান এড়াতে পারেন। এছাড়া কাঁচামালের ঘাটতির কারণে সময়মতো পণ্য সরবরাহ কঠিন হচ্ছে। সংঘাতের কারণে গত সপ্তাহে কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ সম্ভব হয়নি। লোকসান কমাতে ওভারটাইম দিয়ে কারখানা চালু রাখতে হবে। ক্রিসমাসের প্রস্তুতির জন্য ক্রেতারা দ্রুত পণ্য পেতে চান।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় দিনে স্পিনিং, উইভিং, ডাইং ও ফিনিশিংসহ বস্ত্র খাতে ৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার লোকসান হয়েছে। যদিও ক্রেতারা কার্যাদেশ বাতিল বা পণ্যের দামে ছাড় চাচ্ছেন না, তারা কার্যাদেশ দিতে দেরি করছেন। ফলে কারখানায় সুতা ও কাপড় জমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দু-এক দিনের মধ্যে তারা বৈঠকে বসবেন। কার্যাদেশ বাতিল না করতে বা পণ্যের দামে ছাড় না চাইতে অনুরোধ করবেন তারা।