Home বাংলা নিউজ বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়ায় উজ্জীবিত পোশাক শিল্প

বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়ায় উজ্জীবিত পোশাক শিল্প

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস পোলো, গ্যাপ, এক্সপ্রেসের মতো বড় কোম্পানিগুলো তাদের তাদের পোশাক সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এমনকি কোরিয়ার পোশাক ব্র্যান্ড বিওয়াইসি’র মতো নতুন কোম্পানিও এ খাতে যুক্ত হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও কিছু বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাক সংগ্রহ বাড়িয়েছে। পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ড. মুহম্মদ ইউনূস দেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজে বেড়েছে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস পোলো, গ্যাপ, এক্সপ্রেসের মতো বড় কোম্পানিগুলো তাদের তাদের পোশাক সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এমনকি কোরিয়ার পোশাক ব্র্যান্ড বিওয়াইসি’র মতো নতুন কোম্পানিও এ খাতে যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানান, তার কোম্পানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো ইউএস পোলো। ইতোমধ্যে তারা ইউএস পোলোর কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বড় ফরমায়েশ পেয়েছে। তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ শতাংশই দখল করে আছে ইউএস পোলো। 

তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তিনি তার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইউএস পোলোর ঢাকা কার্যালয়ে পাঠান এবং তাদেরকে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। তাদের এ যোগাযোগের কারণে ক্রেতারা আস্থা রাখেন এবং আরো ফরমায়েশ পেতে সহায়তা করেন।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেছেন, তাদের তিনজন ক্রেতা ইতোমধ্যেই তাদের ফরমায়েশ বৃদ্ধি করেছেন। ইউএস পলো এবং গ্যাপ তাদের নিয়মিত ক্রেতা। অপরদিকে আরেক ক্রেতা এক্সপ্রেস দেউলিয়া অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পর তারাও তাদের অর্ডার বাড়িয়েছে।   

মাসকো গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্চেন্ডাইজিং) মো. শরাফত হোসেন সোহেল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো পণ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী একটি শীর্ষ কোরিয়ান ব্র্যান্ড। ইতোমধ্যে তারা মাসকোর কাছে তাদের পণ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তিনি বলেন, “ওই ক্রেতার পক্ষ থেকে একটি দল এই সপ্তাহে আমাদের কার্যালয় পরিদর্শন করবে বলে জানিয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, মাসকো গ্রুপ প্রতি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যান্ডের জন্য  ১১ মিলিয়ন পিস গার্মেন্টস পণ্য তৈরি করে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। ইতোমধ্যে কারখানাটি ইউরোপীয় দের জন্য পরবর্তী গ্রীষ্মের জন্য ফরমায়েশ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। 

ইন্ডাস্ট্রির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের কিছু ক্রেতা ইতিমধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা এই দেশের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।”

ক্রেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

অন্যান্য বিখ্যাত ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের মধ্যে যেমন জি-স্টার র, এম এন্ড এস, এইচ অ্যান্ড এম এবং ইনডিটেক্স পণ্য সরবরাহে দেরি হওয়ায় কোনো জরিমানা আরোপ করেনি। 

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এইচঅ্যান্ডএম এবি কোম্পানিগুলোর সুইডিশ বিক্রেতারা বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের জানিয়েছেন, আন্দোলনের কারণে বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর কাছে তারা কোনো ছাড় চাইবেনা।  

এইচঅ্যান্ডএম-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, “আমাদের সংগ্রহ পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং আমরা কোনো অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছি না।”

এইচঅ্যান্ডএম-এর সাথে সুর মিলিয়ে, ইনডিটেক্সের ঢাকা কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তাদের ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চলছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো অর্ডার স্থানান্তর বা ছাড়ের চাপ দেওয়া হয়নি।

তবে কিছু রপ্তানিকারক চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, বৈশ্বিক ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের প্রতিনিধিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে ফরমায়েশ অন্য কোথাও চলে যেতে পারে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, অস্থায়ী সরকার ক্রেতাদের আশ্বস্ত করার জন্য বার্তা দেবে। 

কিছু রপ্তানিকারক ফরমায়েশ হারাতে পারে

শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বেক্সিমকো এবং নাসার মতো কিছু কোম্পানি তাদের ফরমায়েশ হারাতে পারে। কারণ উৎখাত হওয়া সরকারের সঙ্গে এসব কোম্পানির সম্পর্ক ও এদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় তাদের থেকে ফরমায়েশ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। 

সম্প্রতি এক আলোচনায় থাকা হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএ আজাদ জানিয়েছেন যে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাদের প্রায় ২০% অর্ডার ইতোমধ্যেই অন্য প্রতিযোগী দেশে চলে গেছে।

শিল্প নেতারা তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন যা এখনও তাদের তাড়া করছে। সেগুলো হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি, বন্দরে এবং বিমানবন্দরে কনটেইনার জট।

যদি অস্থায়ী সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়, তবে পোশাক শিল্প বৈশ্বিক বাজারে তাদের শেয়ারও বাড়াতে সক্ষম হবে বলে তারা আশা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here