Home বাংলা নিউজ আশুলিয়ায় বিক্ষোভ থামেনি, গাজীপুরে কারখানা চালু

আশুলিয়ায় বিক্ষোভ থামেনি, গাজীপুরে কারখানা চালু

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবারও শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের মুখে গতকাল সেখানে ১২৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে গাজীপুরে খুলেছে অধিকাংশ কারখানা। সেখানে গতকাল কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।

বেতন, ছুটি, ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে কয়েক দিন ধরে সাভার ও গাজীপুরে চলছে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। এতে শিল্প খাতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এসব বিক্ষোভে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বহিরাগতদের উসকানি রয়েছে বলে মনে করছে সরকার। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গতকাল থেকে সরকার শক্ত অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছিল।

আশুলিয়ায় বিক্ষোভ ঘিরে সংঘর্ষ ও হামলায় গতকাল পুলিশসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে আশুলিয়ার তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিজিএমইএ বলছে, শিল্পের নিরাপত্তায় পুলিশের পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছেন না আশুলিয়ার কারখানা মালিকেরা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পেলে কারখানা বন্ধ রাখতে চান তাঁরা।

আশুলিয়ায় দিনভর বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় বিক্ষোভের কারণে বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ কারখানা গতকাল সকালে চালু হয়। তবে সারা দিনে কয়েকটি কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড, ট্রাউজার লাইন লিমিটেড ও নাসা গ্রুপের কয়েকটি কারখানাসহ অন্তত ৩৬টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। কারখানা-সংলগ্ন নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁদের সরিয়ে দেন বেশ কিছু লোক। তাঁদের মধ্যে জিল্লুর রহমান নামের একজন নিজেকে থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গার্মেন্টস সবার সম্পদ। এগুলো রক্ষায় মাঠে আছি, থাকব।’

সকাল ৯টার দিকে নরসিংহপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন শ্রমিক জানান, সকালে কাজ শুরু হলেও সাড়ে আটটার দিকে বাইরে থেকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল কারখানা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পরে কারখানা ছুটি দেওয়া হয়। সেখানকার শারমিন গ্রুপের কারখানায় হামলার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয় লোকজন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একই এলাকার হা-মীম গ্রুপের কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধাওয়া দেন। তখন উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তৈয়বপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের একটি কারখানা ও ট্রাউজার লাইন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরাও বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

আশুলিয়ায় বিক্ষোভের সময় হামলা, ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের অনেককে আশুলিয়ায় নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ২০–৩০ জনের মতো রোগী এসেছেন। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, নাসা গ্রুপের কারখানার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীরা মারধর করলে তাঁকে উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় তিনি (সারোয়ার) চোখে আঘাত পান। সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাসের মাথা ফেটে যায়। পুলিশের চার-পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন।

১২৯ কারখানায় ছুটি

বিজিএমইএর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের হামলার কারণে গতকাল দুপুরের পর আশুলিয়ায় কারখানা চালানো যায়নি। অনেক কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করতে আসে হামলাকারীরা। ফলে ১২৯ কারখানায় ছুটি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ে গতকাল রাতে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠক করেন আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। বৈঠক শেষে সংগঠনটির সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পের নিরাপত্তায় পুলিশের পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছেন না মালিকেরা। কিছু কারখানায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা হলেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তা প্রতিহত করেন। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পেলে কারখানা বন্ধ রাখতে চান আশুলিয়ার মালিকেরা। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আগামীকাল শনিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে কারখানা চলবে, নাকি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে বুধবার বিকেলে আশুলিয়া ও গাজীপুরের পোশাকশিল্পের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজিএমইএ সভাপতি বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পাওয়ায় বৃহস্পতিবার সব পোশাক কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গাজীপুরে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা

গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সকালে কাজে ফেরেন। বন্ধ রাখা কারখানাগুলোও চালু করা হয়। গতকাল গাজীপুরে কোথাও শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে গাজীপুর নগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্পকারখানার শ্রমিকদের অসন্তোষ ও বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। বিভিন্ন দাবিতে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করছিলেন। তবে গতকাল পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। গাজীপুরের দুই হাজারের বেশি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্য ও শিল্প পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহাম্মেদ বলেন, বিক্ষোভের কারণে গাজীপুরে হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে সমস্যার সমাধান হলে এসব কারখানাও খুলে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here