Home বাংলা নিউজ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে উৎপাদন বাড়াতে তোড়জোড় পোশাক ব্যবসায়ীদের

ঘাটতি পুষিয়ে নিতে উৎপাদন বাড়াতে তোড়জোড় পোশাক ব্যবসায়ীদের

দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও কারফিউ, আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত তিন মাস ধরে পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পোশাক রপ্তানিকারকরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অনেক পোশাক কারখানা এখন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে। কারণ রপ্তানিকারকরা ক্রিসমাসকে সামনে রেখের পশ্চিমা অর্ডার ও আসন্ন শরৎ ও শীতের রপ্তানি আদেশ নিশ্চিত করতে চায়।

এর পাশাপাশি দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ধরে রাখতে সাব-কন্ট্রাক্টরদের দিকে ঝুঁকছেন। তারা বিদেশি বিক্রেতাদের কাছে রপ্তানির মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করছেন।

ভারতীয় রেটিং এজেন্সি কেয়ারএজ রেটিংসের মতে, এই সংকট যদি এক থেকে দুই বছরের বেশি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি আদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে।

বর্তমানে অনেক রপ্তানিকারক আশঙ্কা করছেন, উৎপাদন বিলম্বের কারণে তাদের বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে বা উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হবে। এতে পণ্যপরিবহন খরচ অনেক বাড়বে। এমনকি তারা কিছু রপ্তানি আদেশ বাতিলের আশঙ্কা করছেন।

পোশাক প্রস্তুতকারকদের তথ্য অনুযায়ী, আকাশপথে ঢাকা থেকে ইউরোপে এক কেজি শুকনো কার্গো পরিবহনে খরচ হতে পারে চার ডলারের বেশি। অথচ একই পরিমাণ পণ্য সমুদ্রপথে ১০ সেন্টেরও কম খরচে পরিবহন করা যায়।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিদেশি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো যদি শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করে মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতি দেয়, তাহলে তারা বিরূপ প্রভাব এড়াতে পারবেন।

জানতে চাইলে হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘আমি যে সব খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করি তাদের কাছে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। তাদের কাছে দেশের সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি।’

‘কারখানাগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তারা মেয়াদ বাড়াবেন বলে আমি আশাবাদী,’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, সময়মতো পণ্য উৎপাদন ও শিপমেন্ট নিশ্চিত করতে সাব-কন্ট্রাক্টর খোঁজা হচ্ছে।

এর আগে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বড় বড় পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবির মধ্যে হাজিরা বোনাস ও টিফিন ভাতা বাড়ানোর দাবি আছে।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ইউনিয়ন নেতা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর, কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের ১৮ দাবির সবকটিতেই সম্মত হন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর একটি যৌথ বিবৃতি দেন।

তিনি জানান, শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় হা-মীম গ্রুপের সব কারখানা এখন চালু।

ঢাকার একটি প্রধান ইউরোপীয় খুচরা বিক্রেতার প্রতিনিধি বলেছেন, তার কোম্পানি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কারফিউ, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, রাজনৈতিক পরিবর্তন বা শ্রমিক অস্থিরতার কারণে কোনো ছাড় চায় না। কারণ তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত।

তিনি বলেন, ‘আমরা খুশি যে, এই খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। আমাদের পণ্যের শিপমেন্ট এখন স্বাভাবিক হচ্ছে।’

এইচ অ্যান্ড এম ও মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো প্রতিষ্ঠানে পোশাক সরবরাহকারী শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, শ্রম পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল এবং প্রায় সব কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে।

তার ভাষ্য, ‘আমরা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের একটি অংশ। আমরা যেসব অর্ডার নিই তার বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা সময়মতো পণ্য পৌঁছে দিতে পারব।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই পরিস্থিতির আর্থিক প্রভাবগুলো কাটিয়ে উঠতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোযোগ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমদানি, রপ্তানি, বেতন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও বকেয়া পরিশোধে অসামঞ্জস্যতার কারণে প্রায় সব তৈরি পোশাক কারখানা বর্তমানে ঋণের ভারে জর্জরিত। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের পোশাক ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা না গেলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, যেহেতু পোশাক খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য তারা রোববার বা সোমবার বড় খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। ক্রেতারা দ্রুত ডেলিভারি আশা করছেন, তবে তারা এখনো কোনো অর্ডার বাতিল করেননি।

তার ভাষ্য, ‘সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাক খাত ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারণ অনেক কারখানা পণ্য উৎপাদন করতে ও সময়মতো সরবরাহ করতে পারেনি। এমনকি ক্রেতারা কারখানা পরিদর্শন করতে পারেনি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here