দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের পরই রফতানিমুখী পণ্য তৈরী পোশাকের ভূমিকা অনন্য। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দিল্লি পালানোর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা চলছে। অর্থনীতিকে গতিশীল করতে গত এক মাসে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ, বিশ্বনেতা ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো যখন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগী হচ্ছে; তখন শ্রমিক বিক্ষোভের নামে তৈরী পোশাক শিল্পকে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। বিদেশি ক্রেতারা শীত মৌসুমের জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়ে অর্ডার যখন দেবেন, তখন শ্রমিক অসন্তোষের নামে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে। হিন্দুত্ববাদী ভারতের পাপেট শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে একের পর এক ষড়যন্ত্রের কার্ড ছুড়ছেন। ভারতের স্বার্থে হাসিনার এই নীলনকশা বাস্তবায়নে দেশের প্রশাসনের কিছু আমলা, কিছু ব্যবসায়ী নামের দিল্লির এজেন্ট এবং কিছু শ্রমিক-শ্রমিক নেতা নামের হাসিনার পোষা প্রাণী শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ উস্কে দিচ্ছেন এবং পর্দার আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এবং ‘রামকৃষ্ণ মিশনের’ ন্যায় ‘হোমিও প্যাথি’ ক্রিয়াকলাপ করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা সরকার কঠোরভাবে দমাতে না পারলে সামনে এই ধারা আরো বাড়তে থাকবে। কারণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। খাল কেটে কুমির আনার মতোই হাসিনা নিজের অনিষ্ট করে হলেও বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করেছে হাসিনা। ১৫ বছর ধরে লুটপাট, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার, বোন শেখ রেহানা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের টাকার পাহাড় গড়া এবং দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের পকেট ভারী করতে শেখ হাসিনা ব্যাংক-বীমা-শিল্প-ব্যবসা সবকিছু ধ্বংস করে গেছেন। এ অবস্থায় ড. ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনীতিতে গতি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কিছু সংস্কার কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ‘হেসে খেলে’ মন্ত্রণালয় চালানো এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা’ নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব যেন কারো নেই। এমন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ভারত এবং তার পাপেট হাসিনা পাট শিল্প ধ্বংসের মতোই তৈরী পোশাক ও ওষুধ শিল্প ধ্বংস করে বিশ্ববাজারকে ভারতের কব্জায় নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। নতুন সরকার গঠনের পর ভারত একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড ছুঁড়ছে অথচ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে? জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন কার্ড, ১৫ আগস্টে ১০ লাখ লোকের ঢাকায় অবস্থান, আনসারের সচিবালয় ঘেড়াও, প্রশাসনের কর্মর্কতা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার নামে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন তারই ধারাবাহিকতায় তৈরী পোশাক শিল্পকে টার্গেট করেছে। গত কয়েক দিন ধরে আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের নামে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের তাণ্ডব চলছে। অথচ সরকারের বাণিজ্য-শ্রম-শিল্প-বস্ত্র-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল উপদেষ্টা-সচিব-কর্মকর্তারা নাকে শর্ষের তেল দিয়ে দিবানিদ্রায় গেছেন!
গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও প্রকৃত শ্রমিকরা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে ভারত গভীর ষড়যন্ত্র করছে। এর মধ্যে অপরাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। যারা আন্দোলন করছে তারা প্রকৃত শ্রমিক নয়। প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কর্মস্থলের ধ্বংস চায় না। হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী শ্রমিক নেতা এবং আওয়ামী লীগের এজেন্টরা গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারাই পোশাক শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গার্মেন্টস ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে। শ্রমিকদের যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে গার্মেন্টস সেক্টরে সেসব দাবির কথা শোনা যায়নি। এ সংকট দ্রুত শক্তভাবে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাক শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষের খবর প্রচার হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পণ্য ক্রয়ের অর্ডার না দিয়ে ভারতের তৈরী পোশাক ক্রয়ে বাধ্য হবে। আর যেসব বিদেশি অর্ডার ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর শ্রম ও কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সাভারের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। ইতোমধ্যে শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যালোচনা কমিটি করা হয়েছে। যেখানে যে কেউ শ্রমের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরাও আছে এই কমিটিতে। বিজিএমইএ জানিয়েছে ৪০ থেকে ৬০টি কারখানা এখন বন্ধ আছে। ১০ থেকে ১৫ ভাগ অর্ডার সাময়িক সময়ের জন্য অন্য জায়গায় চলে গেছে।
গার্মেন্টস মালিকরা জানান, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না। তারা ভারতে অর্ডার দিচ্ছেন বেশি। ফলে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে হিন্দুত্ববাদী ভারতের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে। তিন দশক আগে বাংলাদেশের পাট শিল্প ধ্বংস করে ভারতে নতুন নতুন পাটকল গড়ে তোলা হয়েছে। এখন গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে এবং শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরী পোশাক শিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। রফতানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই। রফতানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বৈরশাসক হাসিনা রেজিমে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার ও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনুগত ছাড়া কেউ স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পরেননি। সে কারণে ব্যবসায়ীদের বড় অংশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশেষ ব্যবসায়ী সম্মেলন’ করে শেখ হাসিনাকে ফের ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন। এমনকি মৃত্যুর পরও হাসিনার সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন। আর শেখ হাসিনার পালানোর কয়েক দিন আগে ব্যবসায়ীরা গণভবনে গিয়ে সরকারকে কঠোরভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনাও সুবিধাবাদী কিছু ব্যবসায়ীকে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার সুযোগ করে দেন। হাসিনা পালানোর পর পরিস্থিতি এখন আর সে অবস্থায় নেই। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর কোনো সিন্ডিকেট প্রশ্রয় পাচ্ছে না। যে য্ক্তুরাষ্ট্র জিএসপি বন্ধ করেছিল তারা সেটা ফিরিয়ে দেয়ার পথ খুঁজছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পণ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত করার কথা ভাবছে। ড. ইউনূসকে সব ধরনের সুহযোগিতা দিতে আন্তর্জাতিক মহল উদগ্রীব। ফলে দেশের গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হওয়ার পথে। য্ক্তুরাষ্ট্রের জিএসপি ও ইউরোপীয় ইউনয়নে ‘বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা’ কার্যকর হলে গার্মেন্টস মালিকরা যেমন অধিক লাভবান হবেন তেমনি গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যেও আরো সুখ-সমৃদ্ধি আসবে, বেতন-ভাতা বাড়বে। অথচ গণহত্যাকারী হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া হিন্দুত্ববাদী ভারতের ইন্দনে গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। সে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছে কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টÑ এ দু’টি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত শুরু করেছে। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিতে শ্রমিক অসন্তোষের পুরনো নাটক মঞ্চস্থ করতে চাচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পোশাক খাতে অর্ডার কমে গেছে। বিদেশি ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের ভরসা দিতে সরকারের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া উচিত।
ক্ষমতা হারালেও হাসিনার ষড়যন্ত্র থেমে নেই। পৃথিবীর কোনো দেশই জায়গা না দিলেও তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। সেই ভারতের স্বার্থ তিনি দেখবেন সেটাই স্বাভাবিক। গার্মেন্টস শিল্পের বিরুদ্ধে ভারত এবং তাদের সেবাদাস হাসিনার ষড়যন্ত্র রুখতে অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা, গার্মেন্টস মালিক, শ্রমিক, শ্রমিকনেতা, ছাত্রনেতা এবং গার্মেন্টস শিল্পসংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে। এ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বিগত হাসিনা রেজিমে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-জুলুম-নির্যাতন করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কতই না ক্যারিশমা (!) দেখিয়েছে। দিল্লিতে বসে হাসিনা দেশবিরোধী একের পর এক অপকাণ্ড করছেন আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তা বুঝতেই পারছে না? সরকারকে বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে গার্মেন্টস পণ্যের ৬০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট। দেশের অর্থনীতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কাজেই যারা গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, অগ্নিসংযোগ করছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বুঝতে হবে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী শ্রমিক ও শ্রমিকনেতা নামধারীরা শেখ হাসিনার এজেন্ট। এরা দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুচিন্তিতভাবে গার্মেস্টস সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এরা দেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করে তৈরী পোশাকের বিশ্ববাজার হিন্দুত্ববাদী ভারতের হাতে তুলে দিতে চায়। এদের কঠোরভাবে দমানো না গেলে অন্যান্য সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করবে। নতুন সরকার গঠনের পর থেকে দেখা যাচ্ছে পান থেকে চুন খসলেই তথা ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ছাত্ররা সামান্য ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ করে পরিস্থিতি উত্তাল করে তুলেছিল। আজ এখানে আন্দোলন, কাল ওখানে অবরোধ। এ যেন ছেলেখেলা হয়ে গেছে। এমনকি সরকারের ওপর মহলে সরকারি চাকুরে ডিসি-এসপি পদে পদায়ন নিয়ে সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যে আন্দোলন উত্তপ্ত পরিস্থিতি গড়ে তোলা হয় তা কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পজেটিভ বার্তা নয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করায় বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে। অথচ একের পর এক ষড়যন্ত্র লেগেই রয়েছে। তৈরী পোশাক শিল্প তথা গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিকদের বুঝতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামীতে জিএসপি সুবিধা দেবে। তখন এ শিল্পের আরো পরিধি বাড়বে। সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও টঙ্গীতে যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করছে তারা অর্থের বিনিময়ে কারো ইন্ধনে করছে। প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংস চায় না। প্রায় ৪০ লাখ নারী শ্রমিকসহ ৬০ লাখ মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। মালিকরা যেমন কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তেমনি শ্রমিকরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কাজেই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে মালিক-শ্রমিক উভয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলো ১৩(১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার থেকে এসব কারখানা বন্ধ রয়েছে। শ্রম আইনের এই ধারা অনুযায়ী, শ্রমিকদের অযৌক্তিক ধর্মঘটের কারণে কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা বেতন পাবেন না। ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ নীতি গ্রহণ করে হলেও গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ১৩(১) ধারা তারা সহজে কার্যকর করতে চায় না। দুই সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের অযৌক্তিক আন্দোলন সত্ত্বেও এই ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। তবে গত সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজন মনে করলে তারা এ ধারা প্রয়োগ করতে পারেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মনে রাখতে হবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের অর্থনীতির জন্য শতভাগ অপরিহার্য না। ভারতের দাসী শেখ হাসিনা বিগত দিনগুলোতে দেশের বেশির ভাগ পাটকল বন্ধ করেছে; চিকিকল বন্ধ করে রফতানির ওপর নির্ভরশীল করেছে। এতে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি। ফলে গার্মেন্টস শিল্পকে নিজেদের স্বার্থে মালিক-শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে। ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে মালিক-শ্রমিকদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল করতে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।
হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলোকে মনে রাখতে হবে হাসিনা রেজিমে কেউ স্বাভাবিকভাবে রাজনীতি দূরের কথা চলাফেরা করতে পারতেন না। বছরের পর বছর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে, রাতে ঘরে ঘুমাতে পারেননি। এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলে শত্রুরা (পতিত হাসিনা ও ভারত) যাতে সফল না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে হাসিনা সরকারের ১৫ বছর জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে সুনামি বয়ে গেছে। ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াতের লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নিয়েছিল হাসিনা গংরা। নির্বাচন কমিশন থেকে দলের নিবন্ধন বাতিল এমনকি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ তুলে নিয়ে জামায়াতকে নতুন প্রাণ দিয়েছে। নতুন করে রাজনীতির সুযোগ পেয়ে জামায়াত নেতাদের ‘মুই কি হনুরে’ ভাব দেখিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ রাজনৈতিক শত্রুর (হাসিনা ও ভারত) হাত শক্তিশালী করবে। মনে রাখতে হবে বিএনপি ও জামায়াতের কমন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ এবং ভারত হচ্ছে হাসিনার রাজনৈতিক মুরুব্বি। এখন মতভেদ নয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কমন প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাট্ট থাকতে হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের হাত শক্তিশালী করতে যা যা করা প্রয়োজন তা করতে হবে। দিল্লিতে বসে হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক অপকর্ম করছেন, দেশের কিছু ভারতীয় এজেন্ট সেটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সামনে; এ অবস্থায় বিএনপিকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ড. ইউনূসের সরকারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে বিএনপি, জামায়াতসহ ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতন ভোগ করা দলগুলোর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। আর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলদের বোঝা উচিত সরকার পরিচালনা কোনো এনজিও বা আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম নয়। সরকার পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দমনে কঠোর হতে হবে। আর হিন্দুত্ববাদী ভারতের মতো চানক্যনীতির দেশ যদি ষড়যন্ত্র করে তাহলে ২৪ ঘণ্টাই সতর্ক থাকা আবশ্যক। দেশের মানুষ বহু বছর পর স্বাধীন জীবন পেয়েছে। আর ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে। গোটা বিশ্বে ড. ইউনূসের নামডাক রয়েছে। এখন যদি ভারতের চানক্যনীতিতে দেশের গার্মেন্টস শিল্পের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে তার দায় ড. মুহম্মদ ইউনূসও এড়াতে পারবেন না।
news Sources : dailyinqilab