তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সচিবালয়ে তৈরি পোশাক খাতের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন সাত উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা বলেন, শ্রমিকরা নয় বহিরাগতরাই তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমিক আন্দোলনে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে তৈরি পোশাক কারখানা। গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় কারখানা। তবে, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আসলেও বুধবার সকালে আবারও অস্থির হয়ে ওঠে শিল্প এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা হয়।
হঠাৎ তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতার নেপথ্যে কী? অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টারা বলছেন, শ্রমিকরা নয় বহিরাগতরা তৈরি পোশাক খাতে সমস্যা তৈরি করছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘বহিরাগত লোকজনের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় মালিকপক্ষ বেতন দিতে দেরি করছে, সে কারণে আন্দোলন হচ্ছে। আর কয়েকটা স্পেসিফিক ফ্যাক্টরি আছে যেখানে মালিকপক্ষ পালিয়ে গেছে। সেগুলোকে আমরা অ্যাড্রেস করছি। সেগুলোর জন্য সরকার সফট লোনের ঘোষণা দিয়েছে এবং সেটা পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘প্রকৃত শ্রমিকরা এই ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে না। কারণ যেখানে তার জীবিকা সেটা সে নষ্ট করবে না। এটা যদি নষ্ট হয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বন্ধ হয়ে যাবে, লোকাল ইন্ড্রাস্ট্রি নষ্ট হয়ে যাবে।’
পোশাক শিল্পে অস্থিরতার পেছনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি নেতাদেরও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানান তারা। ঝুট ব্যবসা নিয়ে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে সাফ জানিয়ে দেন শ্রম উপদেষ্টা।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যারা ঝুট ব্যবসা নিয়ে সন্ত্রাস করছে, আওয়ামী লীগের লোকরা যে সিন্ডিকেট চালাতো তারা তো সেগুলো ছেড়ে চলে গেছে। এখন যারা দখলের পাঁয়তারা করছে এবং এসে এখানে সন্ত্রাস করছে তাদের এবং যারা বহিরাগত আছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
বুধবার সচিবালয়ে তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন সাত উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা। এ সময় যারা অন্যায় ও অস্থিরতা তৈরি করতে চায় তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে অবস্থান স্পষ্ট করেন সবাই। পরে আইজিপি জানান, যৌথ অভিযানে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে।
পুলিশ মহাদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক অস্ত্র পাচ্ছি। অনেক জায়গায় অস্ত্র ফেলে যাচ্ছে কেউ। অনেক জায়গায় আমরা গতরাত থেকে অভিযান শুরু করেছি। আশা করি আমরা একটা ভালো ফলাফল দিতে পারবো।’
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সবকিছু ঠিক হতে একটু সময় লাগবে। ধীরে ধীরে পুলিশবাহিনী স্বাভাবিক কাজে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের ইমেজ আস্তে আস্তে উন্নত হচ্ছে। আমার কাছে এমন কোনোকিছু নেই যে আমি একদিনে সব উন্নত করতে পারবো। এটা আস্তে আস্তে হবে।’
দেশে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। তাই দ্রুত এ সংকটের সমাধান না হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
News Sources : ekhon