Home বাংলা নিউজ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে একের পর এক প্রণোদনা দিচ্ছে চীন

অর্থনীতি চাঙ্গা করতে একের পর এক প্রণোদনা দিচ্ছে চীন

বিশ্বের কারখানা বলা হয় চীনকে। এ দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা থাকলে শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বে এর প্রভাব পড়ে। তাই করোনা-পরবর্তী চীনের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি বিশ্বের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে একের পর এক প্রণোদানা ও নীতি সহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার।এরই মধ্যে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কমানো ও নিয়ম-নীতি শিথিল করা হয়েছে।

এবার বিশেষ বন্ড ছাড়তে যাচ্ছে বেইজিং। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়ে এই বন্ড ছাড়া হবে, যার মাধ্যমে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি ইউয়ান বাজার থেকে তোলা হবে। আগামী তিন মাস ধরে এই অর্থ আবাসন ব্যবসা, স্থানীয় পুঁজি সরবরাহ ও ব্যাংক ব্যবস্থাকে জোরদার করতে ব্যয় করা হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চীনের অর্থমন্ত্রী লান ফো’য়ান ও অন্য কর্মকর্তারা একটি বহুল প্রত্যাশিত সংবাদ সম্মেলনে বন্ড ছাড়ার ঘোষণা দেন। অর্ধনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়ে গত সপ্তাহেও বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ছিল সুদের হার কমানো ও ব্যাংকগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করা।

বছরের পর বছর ধরে চলা আবাসনশিল্পের সংকট ও ভোক্তাদের কম কেনাকাটার কারণে চীনের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে।কর্মকর্তারা আশা করছেন যে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে অর্থনীতির শ্লথগতি ধারা ঠেকানো এবং চলতি বছরে ৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অনেক মনে হলেও চীনের জন্য এই হার বেশ কম। কারণ দেশটি বছরের পর বছর দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

চীনের অর্থমন্ত্রী লান ফো’য়ান শনিবার বলেছেন, বেইজিং ট্রেজারি বন্ডের ব্যবহার আরো বাড়াবে এবং একই সঙ্গে অতি দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ বন্ড বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আগামী তিন মাসে বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি ইউয়ান তোলার ব্যবস্থা করা যাবে।’

লান ফো’য়ান আরো জানান, রাষ্ট্র খাতের বড় ব্যাংকগুলোর সহায়তার জন্য বিশেষ সরকারি বন্ড ছাড়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে তিনি জানাননি যে এই বন্ড ছেড়ে সরকারি ঠিক কী পরিমাণ অর্থের সংস্থান করার পরিকল্পনা করছে।

এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারগুলোর ঋণ করার সীমাও বাড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো নির্মাণে আরো বেশি অর্থ খরচ করতে পারবে। সে কারণে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীদের চাকরি রক্ষা করা যাবে। উপ-অর্থমন্ত্রী লিয়াও মিন বলেন, ‘এর ফলে স্থানীয় সরকার ও নির্মাণ কম্পানিগুলোর তারল্য ও ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

চীনের সিসিটিভি চ্যানেল জানিয়েছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক অব চায়না, ব্যাংক অব চায়না এবং চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংকসহ বড় ব্যাংকগুলো ঘোষণা করেছে যে তারা ধাপে ধাপে সুদের হার কমিয়ে আনবে। কয়েকটি বড় শহরে দ্বিতীয় বাড়ির জন্য নেওয়া ঋণ বাদে বাকি সব ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো ব্যবস্থা নেবে।

সিসিটিভির সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, আবাসন বাজার চাঙ্গা করতে ৫০টির বেশি শহরে বিশেষ নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সহস্রাধিক আবাসন কম্পানি এজাতীয় দিবসের ছুটির প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। দেখা গেছে, এবারের প্রচারণায় বিভিন্ন প্রকল্পে মানুষের অংশগ্রহণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শেনঝেন শহরের প্রচারণায় আবাসন কম্পানিগুলো গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে অনেক রাত পর্যন্ত কার্যালয় খুলে রেখেছিল। বেচাকেনা যেমন বেড়েছে, তেমনি মানুষের আনাগোনাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এমনকি অনেক গ্রাহক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসব প্রকল্প দেখতে এসেছে।

গত মাসে চীনের গুয়ানডং প্রদেশের গুয়াংঝু শহরে বাড়ি কেনার ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। সাংহাই ও শেনঝেন শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসব শহরে অন্যান্য শহরের মানুষের আবাসন কেনায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা শিথিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবাসন কেনার জন্য যে এককালীন অর্থ দিতে হয়, তাও কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সূত্র: সিএনএন মানি, রয়টার্স

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here