শীত আসি–আসি করছে। আর তাতেই নীলফামারীর শিল্পশহর সৈয়দপুর থেকে শীতের পরিধেয় পোশাক জ্যাকেট ও টুপি রপ্তানি শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, এবার প্রায় ১০ কোটি টাকার জ্যাকেট রপ্তানির প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এসব জ্যাকেটের বড় অংশই যাবে ভারতে। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানেও রপ্তানি করা হয় এসব জ্যাকেট। পাশাপাশি দেশেও বাজারজাত করা হয় পণ্য দুটি।
সৈয়দপুর রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শীত আসার অনেক আগে থেকেই সৈয়দপুরে জ্যাকেট তৈরি শুরু হয়েছে। এসব জ্যাকেট এখন গুদামজাত করা হচ্ছে। শহরের পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানায় দিনে-রাতে তৈরি হচ্ছে জ্যাকেট, টুপি ও অন্যান্য শীতের পোশাক। এসব কারখানা গড়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লায়। কারখানাগুলোয় রয়েছে ১০টি থেকে দুই শতাধিক স্বয়ংক্রিয় মেশিন। জ্যাকেটসহ শীতের নানা পোশাক তৈরির কাঁচামাল ঝুট কাপড় সংগ্রহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় গার্মেন্টস থেকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারখানামালিকেরা জানান, এবার প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে বেশ ভালো ক্রয়াদেশ মিলছে।
সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা মো. সেলিম দুই শতাধিক মেশিন নিয়ে একটি মাঝারি কারখানা গড়ে তুলেছেন নিজ বাড়িতে। গত সোমবার কারখানাটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত জ্যাকেট তৈরি হচ্ছে। একেকজন শ্রমিক দিনে ৩ থেকে ১০টি জ্যাকেট তৈরি করেন। কারখানার মালিক মো. সেলিম জানান, এসব জ্যাকেট ভারতের শিলিগুড়িতে পাঠানো হবে। চলতি শীত মৌসুমে সৈয়দপুরের বিভিন্ন কারখানা থেকে ১০ কোটি টাকার জ্যাকেট ভারতে রপ্তানি হবে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানেও যাবে দুই কোটি টাকার জ্যাকেট।
শহরের নতুন বাবুপাড়ার এম আর গার্মেন্টসের মালিক মতিয়ার রহমান জানান, এ বছর তিনি দুই কোটি টাকার টুপির ক্রয়াদেশ পেয়েছেন। এ মাসের শেষে এসব টুপি কলকাতায় পাঠানো হবে। এ জন্য শ্রমিক-কর্মচারীরা দিন–রাত কাজ করছেন।
সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া, সাহেবপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, কয়ানিজপাড়া, চাঁদনগর, সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটসহ গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে কয়েক শ গার্মেন্টস কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি শীতের পরিধেয় সামগ্রী বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও সরবরাহ করা হয়। দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি জ্যাকেট ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হয়।
জানতে চাইলে সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি আখতার খান প্রথম আলোকে জানান, এবার ভালো ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এলে এ ব্যবসা আরও বড় হবে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। আখতার খান আরও জানান, সৈয়দপুরের বেশির ভাগ গার্মেন্টস কারখানা রেলের জমিতে গড়ে ওঠায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কারখানায় সহজে ঋণ দিতে চায় না।