Home বাংলা নিউজ পোশাক রপ্তানি বন্ধ হলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক ঝুঁকি কতটা?

পোশাক রপ্তানি বন্ধ হলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক ঝুঁকি কতটা?

দেশের নিট পোশাক খাতে এক বছরের মধ্যে ৫০টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে আরো কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। যারা চাকরি হারাচ্ছে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। 

এতে কারখানার মালিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি দেশের রপ্তানি আয়ও কমছে। কারখানা ভাঙচুর করায় অনেক শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। অন্যায়ভাবে কারখানা বন্ধ করায় মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমার কারখানার আশপাশেই আরো কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে।

সম্প্রতি একটি বড় বড় কারখানার মালিক আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘শ্রমিকদের মাসের বেতন যদি কোনোভাবে দিতেও পারি, ব্যাংকের ঋণ তো দিতে পারব না। এর ফলাফল কী দাঁড়াবে? আমি কী তাহলে জেলে থাকব?’

সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এতে যা বলা হয়েছে তা দেশের জন্য আশঙ্কাজনক। এক বছরে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্ডার হাতছাড়া হয়ে গেছে এবং বাতিল হয়ে যাওয়া কী পরিমাণ অর্ডার ভারতে যাচ্ছে, তার তথ্য ভিডিওটিতে রয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের পরিস্থিতি এই পর্যায়ে আসার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রম অসন্তোষ অন্যতম। এ কারণে অনেকে শিপমেন্ট করতে পারেনি। শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। ফলে ব্যাংক সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।

কারখানা বন্ধ করে দিয়ে আর ব্যবসা করতে দিচ্ছে না। বায়ারদের অনৈতিক আচরণের কারণেও অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমেরিকায় যত বাঙালি ব্যবসা করে, তাদের বেশির ভাগই প্রতারক। বাংলাদেশে যারা পোশাকের ব্যবসা করে, তাদের অনেকের ভরাডুবির পেছনে তাদের হাত রয়েছে। তারা নিজেরাই বায়ার সাজে। ঢাকায় অফিস খোলে। তারপর অর্ডার প্লেস করে শুরু করে প্রতারণা। এতে অনেক কারখানা মালিক ফেঁসে যায়। ফলে কারখানা বন্ধ হয়। ব্যাংকের অসহযোগিতাও অন্যতম কারণ। গত এক থেকে দুই বছর যাবৎ ব্যাংক নানাভাবে অসহযোগিতা করছে। ব্যাংক সময়মতো এলসি করছে না। ২০-২৫ দিন ফেলে রাখে। এতে পণ্য আনার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করতে হয়। এয়ারশিপমেন্ট নিতে খরচ হয় অতিরিক্ত টাকা। এসব কারণেই লোকসান হচ্ছে। আমি নিজে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।

এসব বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে পোশাকশিল্প সম্পর্কে ভ্রান্ত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁরা আরেক চোখ থাকলে তারা দেখতে পারত ৯৫ শতাংশ পোশাক কারখানা মালিকদের কী দশা। আজকে যদি পোশাক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, তবে দেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? পোশাকশিল্প সম্পর্কে এসব নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়ার প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here