Home বাংলা নিউজ গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক ও বস্ত্র খাতে খরচ বাড়বে ১৮ হাজার কোটি...

গ্যাসের দাম বাড়ালে পোশাক ও বস্ত্র খাতে খরচ বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হলে পোশাক ও বস্ত্র শিল্প খাতের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে লেখা এক চিঠিতে এমন আশঙ্কার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ।

জ্বালানি উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে সরকার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রায় ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার চিন্তা করছে। এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

চিঠিতে বলা হয়, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটানোর আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত। গত পাঁচ বছরে গ্যাসের দাম ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ; বিদ্যুতের দাম ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও ডিজেলের দাম ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিকভাবে গত পাঁচ বছরে কারখানার গড় উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বর্তমানে শিল্পঘন এলাকাগুলোতে গ্যাস–সংকটের কারণে ৫০-৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমেছে। এতে ব্যাপক আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে উৎপাদন কমায় সরবরাহ শৃঙ্খলেও বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ ও পণ্য রপ্তানির লিড টাইম ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তখন শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি।

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, এমন এক সময়ে সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগটি এসেছে, যখন গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বাড়ালে তৈরি পোশাক খাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। আর বস্ত্র খাতে ব্যয় বাড়বে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়লে সেটি পুরোপুরি বহন করার সক্ষমতা এই শিল্পের থাকবে না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগ বিনিয়োগ সহায়ক নয়।

ব্যবসায়ী নেতারা জ্বালানি উপদেষ্টাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে—এক. শিল্প খাত ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি প্রতিযোগী ও টেকসই মূল্য নির্ধারণের নীতিমালা প্রণয়ন করা। দুই. শিল্প খাতে বিরাজমান গ্যাস–সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ নেওয়া; যেমন সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here