বৈশ্বিকভাবে তৈরি পোশাকের সরবরাহব্যবস্থা পুনরায় ঢেলে সাজাচ্ছে মার্কিন ও ইউরোপিয়ান ব্র্যান্ডগুলো। সরকার পরিবর্তন, শ্রমিক অসন্তোষ, কারখানা বন্ধ থাকা ইত্যাদি কারণে দফায় দফায় অস্থির হয়ে উঠছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
বাংলাদেশের এসব চ্যালেঞ্জ ভারতের জন্য বাড়তি সুবিধা তৈরি করেছে। এ ছাড়া চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত হারে শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফলে যেসব অর্ডার চীনের পাওনা ছিল সেগুলোও ভারতে চলে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে টেসকো (ব্রিটিশ), জেসি পেনি (মার্কিন), ডেকাথলন (ফরাসি), জিএপি (মার্কিন) ও ওয়ালমার্ট (মার্কিন) ভারতীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ফলে চলতি বছরের শুরুতেই ভারতের পোশাক রপ্তানির হার আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার দখলের এই সুযোগ কাজে লাগাতে ভারত সরকারকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন দেশটির অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল বা এইপিসির সেক্রেটারি জেনারেল মিথিলেশ্বর ঠাকুর।
তিনি জানান, তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সব ধরনের গার্মেন্টসের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রডাকশন লিংকড ইনটেনসিভ বা পিএলআই ২.০ স্কিম চালু করার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ছোট আকারের গার্মেন্টসশিল্পের জন্য বিনিয়োগের সীমা কমিয়ে আনা, টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ফান্ড স্কিম বা টিইউএফএস পুনরায় চালুর আবেদন জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রপ্তানিকারকদের জন্য সুদের হারের ওপর ভর্তুকি দেওয়ার স্কিম অব্যাহত রাখা এবং কাপড় ও মেশিনারি আমদানির প্রক্রিয়া আরো সহজ করার দাবি তোলা হয়েছে।
কতটা বেড়েছে ভারতের রপ্তানি?
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলস ইন্ডাস্ট্রি বা সিআইটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের পোশাক (অ্যাপারেল) রপ্তানি ১১.৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৮৫ বিলিয়ন ডলার বা ৯৮৫ কোটি ডলার।
অন্যদিকে বস্ত্র (টেক্সটাইল) রপ্তানি ৩.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৪৭ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৩৪৭ কোটি ডলার। একই সময়ে ভারত থেকে অন্য সব ধরনের পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২.১৭ শতাংশ। অর্থাৎ পোশাক ও বস্ত্র থেকে ভারতের রপ্তানি আয় বেশি হয়েছে।
মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেন, শিগগিরই কিছু অর্ডার চূড়ান্ত হতে পারে। ফলে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উৎপাদনের সময়কাল কমিয়ে আনতে তৎপর হতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দক্ষতাও বজায় রাখতে হবে। মিথিলেশ্বর ঠাকুর আরো বলেন, খরচ কম হওয়ায় বিদেশি কম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকেই তৈরি পোশাক নিত। মজুরির হার কম হওয়া এবং ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা এফটিএ চুক্তির আওতায় তাদের খরচ কম পড়ত। ২০২৩ সালেও শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। তালিকার প্রথম ছিল চীন। একই বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। ভারতের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের কম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে রাজি নয়। শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে কাপড় আমদানি করতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলো উদ্বেগে রয়েছে। অন্যদিকে ভারত এখন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে। ফলে ইউরোপীয় কম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে ভারত শক্ত অবস্থানে আছে। সূত্র : দ্য হিন্দু