কাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে ‘ওজন যাচাই সনদ’ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার জাহাজে তোলা হবে না। আন্তর্জাতিক এই বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার থেকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের ওজন মেপে সনদ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরপরও শুরুতে পণ্য রপ্তানিতে বাধার মুখে পড়ার শঙ্কা কাটছে না।
আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা বা আইএমওর সমুদ্রে জীবনের নিরাপত্তা (সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি) বিষয়ক কনভেনশনের আওতায় এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এই বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। নতুন নিয়মানুযায়ী, রপ্তানি পণ্যসহ কনটেইনারের ওজন পরিমাপ করে সনদ নিতে হবে। এই সনদ ছাড়া কোনো কনটেইনার জাহাজে তোলা হবে না।
ক্রেতার হাতে পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নতুন। এ কারণে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে। তা সমাধানের জন্য কাস্টমস ও বন্দরের প্রতিনিধিসহ একটি শক্তিশালী তদারকি কমিটি গঠন করা উচিত। যাতে যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা যায়। কারণ এক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি না হলে শুধু রপ্তানিকারকের নয়, দেশেরও ক্ষতি হবে।
কনটেইনার ডিপোগুলো সূত্রে জানা গেছে, ওজন মাপার যন্ত্রের অপর্যাপ্ততার কারণে শুরুতে এই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ চট্টগ্রামের ১৬টি ডিপোতে ওজন মাপার যন্ত্র রয়েছে ১৭টি। প্রতিটি কনটেইনারের রপ্তানি পণ্য ওজন করতে এখন কম-বেশি আধা ঘণ্টা সময় লাগছে। এ হিসাবে প্রতিটি যন্ত্রে ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ কনটেইনার ওজন করা সম্ভব। অথচ এই ১৬টি ডিপোতেই সারা দেশের ৯০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। ফলে বেশির ভাগ ডিপো নিজেদের গ্রাহকদের রপ্তানি পণ্য ওজন করতে হিমশিম খেতে হবে।
বেসরকারি ডিপো ছাড়াও ঢাকার কমলাপুর ডিপো ও রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলগুলোতেও ১০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ওজন মাপার ব্যবস্থা নেই। ইপিজেড থেকে যেসব কনটেইনার সরাসরি বন্দর দিয়ে রপ্তানি হবে সেগুলো অনুমোদিত কেন্দ্র থেকে ওজন করে সনদ নিতে হবে। এতে বেসরকারি ডিপোর ওপর চাপ আরও বাড়বে।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেডে ওজন মাপার যন্ত্র নেই। তবে ইপিজেডে থাকা দুটি বেসরকারি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের ওজন করাতে পারবেন রপ্তানিকারকেরা। এ ছাড়া বন্দর ও ওজন মাপার অনুমোদিত কেন্দ্র থেকেও রপ্তানি কনটেইনারের ওজন মাপার সুযোগ আছে।
তবে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, এমনিতেই ডিপোগুলোতে বাড়তি ওজন মাপার যন্ত্র বসাতে হবে। ওজন মাপার যন্ত্র কম থাকা ও বাড়তি পরিচালন কাজের কারণে ডিপোতে শুরুতে সমস্যা হতে পারে। এরই মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো থেকে ডিপোতে এনে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের ওজন করে সনদ দেওয়ার বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে।