পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের কার্যক্রম রুখতে চায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সে জন্য অ্যাকর্ডের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম বুঝে নিতে আলাদা প্ল্যাটফর্ম করার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। ‘সম্মান’ নামে এই উদ্যোগের খসড়া পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে তারা। সরকারের সবুজ সংকেত মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর একাধিক নেতা।
বিজিএমইএ সম্মানের মূল পরিকল্পনা তৈরি করলেও বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। উদ্যোগটি আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য করতে এটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিক সংগঠনকে যুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা করেছে বিজিএমইএ। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনটির একটি বিশেষ দল কাজ করছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সারা জীবন বাংলাদেশে থাকবে না। তাদের কার্যক্রম ধারাবাহিক রাখতে সরকারের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। সেটির জন্য আমরা কাজ করছি। তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’ ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে আজ রোববার সংগঠনের বিশেষ সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। উভয় জোটের অধীনে দুই হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের কাঠামোগত পরিদর্শন শেষ হয়েছে। বর্তমানে কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ তদারকি করছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে জোট দুটির সময়সীমা শেষ হবে। তবে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে অ্যাকর্ড ঘোষণা দেয়, ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যাকর্ডের ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেন বিজিএমইএর নেতারা। তড়িঘড়ি করে নতুন প্ল্যাটফর্মের খসড়া চূড়ান্ত করে দুজন মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কাজ হচ্ছিল। ৬০-৬৫টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। এমনকি উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স নতুন এই উদ্যোগে আপত্তি জানায়নি।
অ্যালায়েন্সের একজন কর্মকর্তা গতকাল জানান, অ্যাকর্ডের মতো অ্যালায়েন্সের সময় বাড়বে না। তবে কার্যক্রম গোটাতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক মাস বেশি লাগতে পারে। এই জোটের ঢাকা কার্যালয়ের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তার চুক্তি আগামী বছরের ১০ জুলাই শেষ হয়ে যাবে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, পোশাক কারখানা পরিদর্শন ও সংস্কারকাজের জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্মানের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্পের অধীনে করতে পারে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীর জন্য স্টিয়ারিং কমিটিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, আইএলও, ব্র্যান্ড, ট্রেড ইউনিয়ন, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। তাঁদের প্রত্যেকের সমান ভোটিং ক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া শীর্ষ পদে একজন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা থাকবেন। গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পদ দুটিতে বিদেশি নিয়োগ করা হতে পারে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল বলেন, ‘নতুন উদ্যোগটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকবে। সদস্য কারখানাগুলো এ জন্য অর্থায়ন করবে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নেওয়া হবে না। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অধীনে থাকা কারখানাসহ সব পোশাক কারখানাকে সম্মানের অধীনে আনা হবে।’
মাহমুদ হাসান খান বলেন, অ্যাকর্ড নতুন করে সময় বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তি দিয়েছে, তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কোনো সংস্থা তৈরি নয়। সে জন্যই আলাদা উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। চলতি বছরের শেষ দিকে সম্মানের চূড়ান্ত কাঠামো ঘোষণা করা হবে।