Home Bangla Recent হলমার্ক বিসমিল্লাহর মতো আবারো বড় কেলেঙ্কারি কি?

হলমার্ক বিসমিল্লাহর মতো আবারো বড় কেলেঙ্কারি কি?

রফতানি আদেশ ৬০০ কোটি টাকার। এ পরিমাণ পোশাক তৈরিতে চীন থেকে কাপড় আমদানির কথা ৪০০ কোটি টাকার। আমদানি কনটেইনারে কী পরিমাণ কাপড় এসেছে, নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ৩০০ কোটি টাকা এরই মধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছে। কাপড় আমদানিতে মূল্যও ধরা হয়েছে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি।

আবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক যে প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের ২০ পোশাক কারখানা রফতানি আদেশ নিয়েছে, সেটিও নামসর্বস্ব। আমদানিকারক হিসেবে অখ্যাত ওয়াইঅ্যান্ডএক্স হোম লিমিটেডের মালিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন বাংলাদেশী। ৬০০ কোটি টাকার রফতানি আদেশ দেয়ার মতো সক্ষমতা প্রতিষ্ঠানটির আছে কিনা, সংশয় আছে তা নিয়েও। তাই পোশাক রফতানির এ পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহর মতো আবারো বড় কোনো কেলেঙ্কারি আছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পোশাক খাত ঘিরে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারিও হয়েছিল ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমেই ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রফতানি আদেশ ধরার মধ্য দিয়ে এবারো তেমনটা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

ওয়াইঅ্যান্ডএক্স হোম লিমিটেড থেকে রফতানি আদেশ নেয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বেশকিছু বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গিভেন্সি গার্মেন্টস লিমিটেড, এএসটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড, এটিএস পার্ল লিমিটেড, ইউনাইটেড ট্রাউজার্স লিমিটেড, পারফেক্ট ফ্যাশন্স লিমিটেড, আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড, ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড, জ্যারিকো ও মিম অ্যাপারেল এর মধ্যে অন্যতম। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে সাতটি কারখানা এরই মধ্যে রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেছে।

মালিকদের দায়বদ্ধতা থাকলেও কোনোভাবেই তারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন গিভেন্সি গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব আবদুল জাহিদ মুকুল। গতকাল বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত বছর হলি আর্টিজানের ঘটনার পর অনেক বড় কারখানা খালি হয়ে গেছে। ক্রয়াদেশ নেই। এ অবস্থায় ক্রয়াদেশ ধরার মরিয়া মনোভাব থেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছি। এটা অবশ্যই মালিকপক্ষের গাফিলতি না হলেও অজ্ঞতা, অদক্ষতা ও অসচেতনতা। কিছু ব্যাংক ক্রয় চুক্তি গ্রহণ করতে না চাইলেও মালিকরা ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রাজি করিয়েছেন। ক্রয়াদেশ ধরে রাখার স্বার্থেই এসব করা হয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবেই আমরা পরিকল্পিত প্রতারণার শিকার।

ঋণপত্র না খুলেই শুধু ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে রফতানি আদেশ নেয় পোশাক কারখানাগুলো। ব্যাংকারদের ভাষায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে রফতানি আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার শুরুতেই রফতানি আদেশদাতা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি ও ব্যাংকিং ইতিহাস যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকার উভয়েরই দায়বদ্ধতা আছে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, সেলস কন্ট্র্যাক্ট তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন ক্রেতারা প্রথম শ্রেণীর হয়। ক্রেতার রেটিং, ব্যাংকিং চর্চা যাচাই করেই প্রথম শ্রেণীর ক্রেতার সেলস কন্ট্র্যাক্টই গ্রহণযোগ্য ও অনুমোদনযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। নতুনদের ক্ষেত্রে ব্যবসা করা যাবে না তা নয়, তবে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।

খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াইঅ্যান্ডএক্স হোম লিমিটেডের ক্রেডিট রিপোর্ট ছিল নেতিবাচক। ক্রয় চুক্তি করার মতো ভিত্তি প্রতিষ্ঠানটির ছিল না। এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

তার পরও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রফতানি আদেশ কেন নিলেন জানতে চাইলে গিভেন্সির চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের দূরদর্শিতার অভাবে পরিকল্পিত এ প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। তাদের ওপর ভরসা করেই রফতানি আদেশের পক্ষে সায় দিয়েছিলাম। ৩০-৩৫ বছর ব্যবসা করে এ ধরনের অসেচতনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

জানা গেছে, রফতানি আদেশ বাস্তবায়নে কাপড় আমদানির জন্য যে ঋণপত্র খোলা হয়, তাও বেশি দামে। আমদানি বাবদ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এরই মধ্যে পরিশোধ করেছে ব্যাংকগুলো। ৮-১০টা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাংকগুলোর নাম জানা যায়নি।

প্রতারণার পুরো প্রক্রিয়াটিই রফতানি আদেশদাতার পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে দাবি করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান কচি। তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত ক্রেতার নাম ভাঙিয়ে অনেক ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠান সেলস কন্ট্র্যাক্ট পাঠায়। প্রকৃতপক্ষে এখানে যে সেলস কন্ট্র্যাক্ট পাঠাচ্ছে, সে-ই প্রতারণা করছে। একটি চক্রের মাধ্যমে এ ধরনের জালিয়াতি করা সম্ভব। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাই থেকে আগস্ট সময়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়াইঅ্যান্ডএক্স হোম লিমিটেড নামের বায়িং হাউজ থেকে ক্রয়াদেশ পায় দেশের ২০টি পোশাক কারখানা। রফতানিকারকদের একটি অংশের করা মামলার নথি অনুযায়ী, ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে মনোনীত দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকে কাপড় ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি কিনে পোশাক তৈরির পর তা সরবরাহের ব্যবস্থা করেন রফতানিকারকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here