গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো যখনই ঘোষণা দেওয়া হোক, তা আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে নিম্মতম মজুরি বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর হয়েছে। আইন অনুযায়ী, পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর করতে হয়। সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বর থেকেই নতুন মজুির কার্যকর হবে।
গতকালের সভায় কারখানা মালিক ও শ্রমিকপক্ষ নিজ নিজ প্রস্তাব থেকে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে মজুরি নির্ধারণ বিষয়ে বোর্ডের গতকালের বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভুইয়া। উভয় পক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, নিরপক্ষে প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন খাতের নিম্নতম মজুরির বিস্তারিত, মূল্যস্ফীতি ও প্রয়োজনীয় বিভিল্পু তথ্য-উপাত্ত চুলছেরা বিশেষণ করা হয়েছে। গবেষণা সংস্থা সিপিডির প্রস্তাবও বিবেচেনায় নেওয়া হয়েছে। মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের বক্তব্যও শুনেছে বোর্ড। উভয় পক্ষই ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। এখন মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর বোর্ডের পরবর্তী বৈঠকে সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। চেয়ারম্যান বলেন, মজুরি বোর্ডের বর্ধিত সময়সীমা শেষ হবে আগামী ১৭ অক্টোবর। এ সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত মজুরির প্রস্তাব ঘোষণা করবেন তারা। এরপর মন্ত্রণালয় কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এসময় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বোর্ডের সব সদস্য একটা গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণে কাজ করছেন – যাতে শিল্প এবং শ্রমিক সব পক্ষই বাঁচে।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভুঁইয়া এ খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব দেন। আর মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দিয়েছেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকার। যদিও বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সর্বমিম্ন ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানিয়েছে। এ নিয়ে সভা সমাবেশ করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। শ্রমিকদের সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণের শ্রমিক অধিকার ফোরামও। শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইউরোপের ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন শ্রমিকদের এ দাবির প্রতি একাত্বতা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে এ খাতের শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করা হয়। ৫ হাজার ৩শ’ টাকার ন্যুনতম ওই মজুরি কার্যকর হয় ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে।