তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রযোজ্য ১ শতাংশ উৎস কর কমিয়ে গত মাসেই দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবার আরো সুবিধা পাচ্ছে খাতটি। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি পাচ্ছে পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টদের অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের বড় চারটি খাত। এ লক্ষ্যে বিধি সংশোধন করে খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও সরকারের সম্মতিতে তৈরি পোশাক খাতের পরিবহন ব্যয়, ল্যাবরেটরি টেস্ট, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যয় ও শ্রমিক কল্যাণে ব্যয় করা অর্থের ওপর ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীন বিধি প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর স্বাক্ষর শেষে শিগগিরই এসআরও জারি হতে পারে।
এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাটনীতির একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি সেবা খাতে ভ্যাট অব্যাহতির দাবি করেছে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। প্রতিষ্ঠানটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব আহরণচিত্র পর্যালোচনা করে চারটি খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
উেস কর কমানোর পাশাপাশি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে শুরু থেকেই ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে সরকার। প্রচ্ছন্ন রফতানি হিসেবে উপকরণ সংগ্রহ পর্যায়ে কিছু খাতেও এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্ল্যাবভিত্তিক প্রত্যর্পণের মাধ্যমে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ রাখা হয়েছে।
২০০৫ সালে পণ্য উৎপাদন, রফতানি কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট মোট ১৬ ধরনের সেবার ওপর রফতানিকারকদের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়। এর মধ্যে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহূত বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলে ৮০ শতাংশ, ওয়াসার পানিতে ৬০ শতাংশ এবং জোগানদার, সিকিউরিটি সার্ভিস, পরিবহন ঠিকাদার ও বিদেশী সেবা গ্রহণের বিপরীতে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। রফতানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি ও রফতানি পণ্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে বন্দর সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। বন্দর সেবা, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং সংস্থা, বীমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট বিলের ওপর শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পায় রফতানিকারকরা।
এর বাইরে দুটি টেলিফোন বিল, একটি টেলেক্স ও একটি ফ্যাক্স বিলের ওপর শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, যা ২০০৫ সাল থেকে পেয়ে আসছেন রফতানিকারকরা। রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের অগ্নিবীমার প্রিমিয়ামে শতভাগ, বিদেশে নমুনা পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যবহূত কুরিয়ার সার্ভিস সেবায় শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি আছে। এছাড়া রফতানির বিপরীতে প্রাপ্ত কমিশন, ফি ও চার্জের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। এসব সুবিধা স্থানীয় বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদনকারীরা পান না।
জানা গেছে, বিজিএমইএ দীর্ঘদিন ধরে রফতানি-সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা থেকে ভ্যাট অব্যাহতি দাবি করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় ১১ ধরনের সেবার মধ্য থেকে নতুন এ চারটি সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তৈরি পোশাক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব সেবার বিপরীতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া উচিত। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলে ৮০ শতাংশ ও পানির বিলে ৬০ শতাংশ হারে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। এ অব্যাহতির সুবিধা উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না। কারণ অব্যাহতি অর্থ পেতে সব প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে (ডেডো) যেতে হয়। সেখান থেকে অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতকে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া দরকার।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা তৈরি পোশাক শিল্পকে সম্পূর্ণরূপে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে। এজন্য ১১টি সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি দিতে এনবিআরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতির যৌক্তিকতায় তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করে। কিন্তু ভ্যাটের জন্য ওই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে না ধরে পোশাক শিল্পকে ধরা হচ্ছে। তাদের হিসাব পোশাক মালিকরা রাখবেন কেন? এনবিআর যদি ভ্যাট আদায় করতে চায়, তাহলে সেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে আদায় করুক। এতে বিজিএমইএর আপত্তি নেই।
তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরই আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দাম কমে যাওয়া ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর স্ল্যাবভিত্তিক অব্যাহতি দেয়া হলেও প্রত্যর্পণসংক্রান্ত জটিলতায় তা ফেরত পান না শিল্পমালিকরা। শুল্ক ও রেয়াত প্রত্যর্পণ অধিদপ্তরের কাগজপত্র দাখিলসংক্রান্ত কাজ অত্যন্ত জটিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন। ফলে এ শিল্পকে বাঁচাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলের ওপরও শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া দরকার।