তৈরি পোশাক খাতের নতুন ও অপ্রচলিত বাজারে বেশ ভালো হারে রপ্তানি বেড়েছে গত কয়েক মাসে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসব বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ। আর গত তিন মাসে সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। আলোচ্য সময়ে এ বাজারগুলোতে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৩৩ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থাত্ গত তিন মাসে এসব বাজারে পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে অন্য দেশগুলো পোশাক খাতের জন্য নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত। এ তালিকায় প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও রয়েছে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি অপেক্ষাকৃত বেশি হারে বেড়েছে। এর পেছনে শুল্কমুক্ত সুবিধাকে বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করছেন রপ্তানিকারকরা। জাপান ও কোরিয়াতে রপ্তানি করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ভারত, চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে এসব বাজারে রপ্তানির বিপরীতে সরকার তিন শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিচ্ছে। এর ফলে এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। তবে খুবই প্রতিযোগিতামূলক দর হওয়া রপ্তানিকারকদের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি।
নতুন বাজারে রপ্তানি করেন- এমন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কিছু কিছু দেশে মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক হওয়ায় বাংলাদেশ সেখানে কাঙ্ক্ষিত হারে রপ্তানি বাড়াতে পারছে না। যেমন ব্রাজিলে শুল্ক ৪০ শতাংশ। এর সঙ্গে অন্যান্য শুল্ক-কর যুক্ত হয়ে তা প্রায় ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানিতে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ৪০ শতাংশ। রাশিয়ায় ২০ শতাংশ শুল্ক ছাড়াও বাড়তি ওজনের উপর রয়েছে বাড়তি কর। এই শুল্কহার আবার সব দেশের ক্ষেত্রে সমান নয়। দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) থাকায় এসব দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত কিংবা স্বল্প শুল্কে আমদানি-রপ্তানি হয়। ফলে এসব দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। তবে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যে দেশে রপ্তানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেখানে রপ্তানি বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত বেশি।
গত তিন মাসে ভারতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি, ১৬৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ১৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের। নতুন বাজারের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষাকৃত বড় এবং সম্ভাবনাময় বাজার জাপান। আলোচ্য সময়ে এ বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে জাপানে ২৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৭ কোটি ডলারের। চীনে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। গত তিন মাসে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১১ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের। দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ আর মেক্সিকোতে ৪৮ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য আরেক বড় বাজার অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। গত তিন মাসে এই দেশটিতে বাংলাদেশ ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ব্রাজিল, রাশিয়া, তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে সাড়ে আট শতাংশ, ৮ দশমিক ৮০ ও সাড়ে ৯ শতাংশ হারে। এর বাইরে অন্যান্য বাজারে গত তিন মাসে ৩০ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হলেও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের।