দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় মাত্র ১৭৭ জন বিদেশি কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকই ভারতীয়। শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে অধিকাংশ কারখানা তথ্য না দেওয়ার কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির ৪ হাজার ৫৬০ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫২টি প্রতিষ্ঠান তথ্য দিয়েছে। জানা যায়, বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই গত ২৯ এপ্রিল পোশাক কারখানায় কর্মরত বিদেশিদের সংখ্যা জানতে চেয়ে সদস্যদের চিঠি দেয়। চিঠিতে ১০ মের মধ্যে কর্মরত বিদেশির নাম ও পদবি, কোন বিভাগ, কাজের দক্ষতা, কত দিন ধরে কর্মরত, জাতীয়তা ও মাসিক বেতন কত—এসব বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা তাগিদ দেওয়ার পর ৫২টি পোশাক কারখানা তথ্য সরবরাহ করে। অল্প কয়েকটি কারখানা তথ্য দেওয়ায় বিজিএমইএ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। পোশাকশিল্পের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, অধিকাংশ রপ্তানিমুখী মাঝারি ও বড় কারখানাতেই বিদেশি বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। বড় ব্যবসায়িক গ্রুপে বিদেশির সংখ্যা অর্ধশতাধিকও আছেন। ফলে ১৭৭ জনের কয়েক গুণ বেশি বিদেশি শ্রমিক যে এ খাতে কাজ করেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পোশাক খাতের বড় গ্রুপগুলোর একটি অনন্ত গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন ২৮ হাজার কর্মী। তাঁদের মধ্যে বিদেশি কর্মী আছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে অর্ধেকই ভারতীয় চারজনের মধ্যে একজন হচ্ছেন শ্রীলঙ্কান বিদেশির মধ্যে অধিকাংশই কারখানার উৎপাদনকাজে জড়িত মাসিক বেতন ৫-৭ লাখ টাকা । জানতে চাইলে অনন্ত গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু নতুন বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদন করছি। যেমন স্যুট, ব্রা, প্যান্টি ইত্যাদি। এসব পণ্যের বিশেষজ্ঞ আমাদের দেশে নেই। তাই বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনতে হয়েছে। তাঁরা মূলত কারখানার পণ্য উৎপাদনে কারিগরি দিক দেখভাল করেন।’ বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ৫২টি পোশাক কারখানা কাজ করেন ১৭৭ জন বিদেশি। তাঁদের মধ্যে তুরস্কের নাগরিক ১ দশমিক ৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ৮ শতাংশ, পাকিস্তানের ১ শতাংশ, ভারতীয় ৪৮ শতাংশ এবং চীনের ১৩ শতাংশ। পোশাক কারখানায় কর্মরত এই বিদেশিদের অধিকাংশ বা ২৭ দশমিক ১ শতাংশ উৎপাদনকাজের সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে সাড়ে ৪ শতাংশ টেকনিশিয়ান, সেলাইয়ের কাজে ৯ শতাংশ, স্যাম্পল তৈরিতে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, গবেষণায় দশমিক ৫ শতাংশ, মান নিয়ন্ত্রণে ১১ শতাংশ, মার্চেন্ডাইজিংয়ে ১ শতাংশ, মার্কেটিংয়ে ৬ শতাংশ, রক্ষণাবেক্ষণে ৩ শতাংশ ও প্রকৌশলী পদে কর্মরত আছেন ৫ শতাংশ বিদেশি কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক কারখানায় কর্মরত বিদেশিরা মাসে গড়ে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা বেতন পান। তিনি বলেন, যেহেতু খুবই কম কারখানা থেকে তথ্য–উপাত্ত পেয়েছি, সে জন্য আমরা শিগগিরই সদস্যদের আবারও চিঠি দেব।’ ফয়সাল সামাদ আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে চাই, দেশের পোশাকশিল্পের কোন কোন বিভাগে কতজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পেলে আমরা আমাদের লোকজন যাতে সেসব জায়গায় যেতে পারেন, সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পারব। সেটি হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার গত বছর এক গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা বৈধ পথে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে নিয়ে যান, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে এসব বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। বাংলাদেশে কত বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তার একটি হিসাব গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তাঁর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন, তাঁদের প্রায় অর্ধেকই ভারতীয়। ভারতীয়দের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন এবং চীনের নাগরিক ১৩ হাজার ২৬৮ জন।