আশুলিয়ার বসুন্ধরা গার্মেন্টসে বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আগেও ছিল। আসন্ন ঈদেও একই সমস্যার আশঙ্কা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় ১ হাজার ২০০ শ্রমিক নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কারখানাটিকে তাই ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে শিল্প পুলিশ। বসুন্ধরা গার্মেন্টসের মতোই মজুরি, বোনাস ও ছুটিসংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যা হতে পারে এমন কারখানার তালিকা করেছে পুলিশ। তালিকায় দেশের ছয় শিল্পাঞ্চলে সমস্যাপ্রবণ কারখানা রয়েছে ৩২৮টি। বস্ত্র ও পোশাক, পাদুকা, আসবাবসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানাই রয়েছে এর মধ্যে। তালিকায় পোশাক খাতের কারখানা রয়েছে ১৯২ ও বস্ত্র খাতের নয়টি। এ হিসাবে সমস্যাপ্রবণ কারখানার ৬১ শতাংশই এ দুই খাতের। শিল্প পুলিশের আওতাভুক্ত আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা শিল্পাঞ্চলে সব ধরনের শিল্প ইউনিট রয়েছে সাত হাজারের বেশি। শিল্প পুলিশের হিসাবে, এর মধ্যে সমস্যাপ্রবণ কারখানার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি শিল্প পুলিশ ১ বা আশুলিয়া অঞ্চলে। শিল্পাঞ্চলটিতে কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ১৩৬টি। এর মধ্যে ৮৪টি কারখানা বিভিন্ন মাত্রায় সমস্যাপ্রবণ। এসব কারখানার ৩৫টি আবার পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য। পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য সমস্যাপ্রবণ কারখানা রয়েছে চারটি। এছাড়া বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য একটি কারখানাও রয়েছে তালিকায়। অঞ্চলটিতে সমস্যাপ্রবণ বাকি ২৭টি কারখানা অন্যান্য খাতের। শিল্প পুলিশ ২ বা গাজীপুর এলাকায় সব শিল্প মিলিয়ে কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ৯৭৬টি। এর মধ্যে সমস্যাপ্রবণ কারখানার সংখ্যা ৫৮। সমস্যাপ্রবণ এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য রয়েছে ৪১ ও বিকেএমইএর সদস্য পাঁচটি। বাকি ১২টি কারখানা অন্যান্য শিল্প খাতের। আশুলিয়ার পর সমস্যাপ্রবণ কারখানার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি শিল্প পুলিশ ৩ বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এ শিল্পাঞ্চলের ১ হাজার ৮২টি কারখানার মধ্যে ৭৯টি বিভিন্ন মাত্রায় সমস্যাপ্রবণ। সমস্যাপ্রবণ এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য রয়েছে ৩৯, বিকেএমইএর সদস্য পাঁচ, বিটিএমএর সদস্য দুই ও অন্যান্য খাতের কারখানা ৩৩টি। শিল্প পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ৭৮টি সমস্যাপ্রবণ কারখানা রয়েছে শিল্প পুলিশ ৪ বা নারায়ণগঞ্জে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন খাতের ২ হাজার ৪০০টি কারখানার মধ্যে ৭৮টি বিভিন্ন মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ১২, বিকেএমইএর সদস্য ২৭ ও বিটিএমএর সদস্য কারখানা পাঁচটি। নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সমস্যাপ্রবণ অবশিষ্ট ৩৪টি কারখানা অন্যান্য শিল্প খাতের। শিল্প পুলিশ ৫ বা ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিভিন্ন খাতের শিল্প-কারখানা রয়েছে সব মিলিয়ে ২৬৩টি। এর মধ্যে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা আছে নয়টি কারখানায়। সমস্যাপ্রবণ এসব কারখানার মধ্যে সংখ্যায় বেশি পোশাক শিল্প। এ শিল্প খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য এ অঞ্চলের সাতটি কারখানাকে সমস্যাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে শিল্প পুলিশ। এ তালিকায় বস্ত্র খাতের কারখানা রয়েছে একটি ও অন্যান্য খাতের একটি। শিল্প পুলিশের হিসাবে খুলনায় সমস্যাপ্রবণ কারখানা রয়েছে ২০টি। কারখানাগুলোর সবই বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বাইরের, যার অধিকাংশই পাটকল। শিল্প পুলিশ ৬ বা খুলনায় বিভিন্ন খাতের শিল্প-কারখানা রয়েছে মোট ২২১টি। শিল্প পুলিশের সূত্র বলছে, সমস্যাপ্রবণ এসব কারখানার তালিকা এরই মধ্যে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। সমস্যা সমাধানে তারা কাজও করছে। জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক অ্যাডিশনাল আইজিপি আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এমন কারখানাগুলোর বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে জানানো হয়েছে। সব পক্ষেরই নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে কারখানাগুলো। ছোটখাটো যেকোনো সমস্যা সব পক্ষের সমন্বয়ে সমাধান করা হচ্ছে। অন্যান্য বছর সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হতো। এবার সেটা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সবচেয়ে বড় শিল্প খাত হিসেবে পোশাক কারখানা ঘিরে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে বেশি। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমাদের কাছে ১৫০টি কারখানার তালিকা আছে। আমাদের বিশ্লেষণে এর মধ্যে ৪৬টি কারখানার পরিস্থিতি জটিল। সাতটি কারখানাকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বেশকিছু কারখানা আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছে।